ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
কালীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিলনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে দেশজুড়ে যখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তখন সারা দেশের মানুষ একটি স্বাধীন, দুর্নীতিমুক্ত, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই স্বপ্ন অচিরেই বিভীষিকায় রূপ নেয়। নতুন শাসনব্যবস্থার ছত্রছায়ায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পুরনো নিয়মের নতুন চাঁদাবাজ, লম্পট ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা। যারা একদিন এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, আজ তারাই ক্ষমতার দাপটে লিপ্ত হচ্ছে একই কুকর্মে। বাদ যায়নি মসজিদ উন্নয়নের জন্য জনসাধারনের দানের টাকাও।
এই চিত্রের জ্বলন্ত উদাহরণ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং জামাল ইউনিয়নের মিলন হোসেন। তিনি বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সদস্য সচিব। অথচ এই পদটিকে ব্যবহার করে তিনি একের পর এক দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে তুলেছেন। তার কাছে প্রশাসন যেন হাতের খেলনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে মিলন হোসেন কখনও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছেন, আবার কখনো সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে চাঁদাবাজি করছেন। এমনকি দলীয় কর্মীরাও পাচ্ছে না ছাড় ।
এদিকে, মুঠোফোনে দেখা করার নাম করে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে, হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা এসব যেন তার জন্য নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাস তার বিরুদ্ধে চলন্ত মোটরসাইকেল বহর থেকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর বোমা হামলার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ উন্নয়নের অর্থসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত তার লুটপাট ও আধিপত্যের বাইরে নয়।
ভুক্তভোগী কালীগঞ্জ উপজেলার বড়তালিয়ান গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, মিলন তার কাছে তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত আতঙ্কগ্রস্ত শরিফুল ইসলাম এক লাখ ষাট হাজার টাকা দিয়ে তার সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করতে বাধ্য হন। বিষয়টি দাড়িয়েছে নিজের অর্থদিয়ে অন্যের নিকট প্রাণ ভিক্ষার মতো।
একইভাবে, শরিফুল ইসলামের প্রতিবেশী মাসুমসহ আরও চারজনের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ৪, ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন তিনি।
বিএনপির কর্মী মংলা বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিলন আমার থেকে মামলার নিষ্পত্তির আশ্বাসে অর্থ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে না পারায় আমি তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে দল ত্যাগ করেছি।
অন্যদিকে একই উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের মসজিদের সিঁড়ি নির্মাণের জন্য স্থানীয় মুসল্লিদের সম্মিলিত দানের চল্লিশ হাজার টাকা সংগ্রহ করে মিলনের নিকট দেওয়া হয়। সময়মতো কাজ শুরু না হওয়ায় জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাজেট না থাকার অজুহাত দেখান। অথচ টাকাগুলো সাধারণ মুসল্লিরাই নিজেদের উদ্যোগে কালেকশন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত টাকাগুলো আত্মসাৎ করেন মিলন।
এদিকে আরও সরকারি ফ্লাট সলিং প্রকল্পে মিলন হোসেনের নামে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি মাত্র ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা খরচ করে ২২০ ফুট রাস্তা নির্মাণ করেন, যেখানে কাজ হওয়ার কথা ছিল ৩০০ ফুট। এতে প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা প্রকল্পের দুর্নীতির প্রকট উদাহরণ।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিলনের এতসব চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পরও মিলন হোসেন বর্তমানে বাসুদেবপুর হাই স্কুল কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই সাথে তিনি বিএনপির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবের মতো দায়িত্বশীল পদেও রয়েছেন। এই ধরনের একটি চরিত্রকে এত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন পদে আসীন রাখা দলীয় ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ও অপকর্মের প্রমাণ থাকা সত্বেও, তাকে কমিটির সভাপতি হিসাবে বহাল রাখা এবং রাজনৈতিক দায়িত্বে অব্যাহত রাখা স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভও হতাশার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতি যদি দ্রুত পরিবর্তন না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ দল ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারাবে, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
এবিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিলনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ দিতে পারেন, আপনারা এলাকায় এসে তদন্ত করে দেখতে পারেন।