ঝিনেদার কাগজ ডেস্ক
সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়ন বিএনপির দুইপক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন দুই ভাই। নিহতরা জামায়াত নাকি বিএনপিকর্মী তা নিয়ে চলছে বিএনপির এক পক্ষ ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি অবস্থান। বিএনপির একপক্ষ নিহতদের জামায়াত কর্মী দাবি করলেও মৃত্যুর পর পর বিএনপির হামিদুল ইসলামের নেতাকর্মীরা নিহতদের নিজদলের ত্যাগী কর্মী দাবি করে কালীগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। হামিদুল ইসলাম নিজে নিহতদের জানাজার নামাজে উপস্থিত থেকে এবং আসবাবপত্র ভাংচুর হওয়া বাড়ি পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের নেতৃত্বাধীন একটি দল সরে জমিনে তদন্ত সাপেক্ষে বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল দাবি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কার করে। একই সঙ্গে উপজেলা বিএনপির কমিটিও বিলুপ্তি ঘোষণা করে। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ও কোলা ইউনিয়নে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে ২ জন নিহত

ও বাড়ী ঘর ভাংচুরের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ডা. নুরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সদস্য আশরাফ হোসেন (মুহুরী) কে দলীয় সকল পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, পরবর্তীতে উক্ত ঘটনাবলির সাথে জড়িত যদি কেউ থাকে, অধিকতর ও তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, ঘটনার দিন সোস্যালমিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিতে দেখা যায়, একদল মোটরসাইকেল আরোহী চলন্ত অবস্থায় বলছেন, আমরা গাজীর বাজার ও দামোদরপুর থেকে কোলাবাজারে গিয়েছিলাম, আমাদের ভাইদের পাশে দাড়ানোর জন্য, আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থ আছে, কোলা ইউনিয়ন আজ মুক্ত, স্বাধীন।
নিহতরা দলীয় কর্মী কিনা জানতে চাইলে উপজেলা জামায়াতের এক নেতা বলেন, নিহত দুই ভাই ইউনুছ আলী ও মহব্বত হোসেন কোনোদিন তাদের কর্মী ছিলেন না। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি ছড়িয়ে তাদেরকে জামায়াত কর্মী দাবি করো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আমাদের কর্মী হতে হলে মাসিক রিপোর্ট রাখতে হয়। তাদের এমন কোনো মাসিক রিপোর্ট আছে কি না বা উপজেলা আমিরের স্বাক্ষরিত কোনো রিপোর্ট বই থাকলে হাজি করে আমাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণ করুন।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমের সংবাদ সূত্রে জানতে পেরেছি যে, ঘটনার সময় নিহতের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা করে সব কিছু ভাংচুর ও লুটপাট করে। সে সময় নিহতদের বাড়ি থেকে জামায়াতের রিপোর্ট বই নিহতদের বাসায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন এমন কিছু তারা পায় নাই, কোনো প্রমাণ তারা উপস্থিত করতে না পেরে আমাদের দলের সামাজিক সহায়তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার দরুন তাদের কে জামায়াত কর্মী দাবি করতে পারে না। আমাদের দলের নির্ধারিত নিয়ম কানুন আছে, যার মধ্যদিয়ে দলের সদস্যদের চলতে হয়। মূলত এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বাঁচাতে জামায়াতকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এক শ্রেণী সোস্যাল মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টায় আছে।
জানা যায়, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপির অপর পক্ষ আরিফ, লিটন, বুলু ও আশরাফের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে ১ জুন সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামে একজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। আহত হয় তার ভাই ইউনুছ আলীসহ আরও ৪ জন। ঘটনার তিন দিন পর মহব্বতের বড় ভাই ইউনুছ আলী যশোরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
ঘটনার পর ঝিনাইদ-৪ আসনের ৪ বারের এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী মুর্শিদা জামান নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে উপস্থিত সাংবাদিকদের কালীগঞ্জ বিএনপির গ্রুপিংয়ের পুরাতন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিহতরা দীর্ঘদিন যাবত বেল্টু মিয়ার সঙ্গে বিএনপি করে আসছেন, বর্তমানে বেল্টু মিয়া মারা যাওয়ায় তারা অবিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, নিহতদের জামায়াতকর্মী বলে ডা. নুরুল ইসলামের সমর্থকরা সোস্যাল মিডিয়ায় লেখালেখির মাধ্যমে দাবি করলেও, শনিবার সকালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াত সেই দাবি সাফ উড়িয়ে দিয়েছে।
গত ১১ জুন উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করা হয়, নিহতরা জামায়াতকর্মী। দীর্ঘদিন তারা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রমাণ হিসেবে জামায়াতের একটি অনুষ্ঠানে নিহত ইউনুছ আলীর উপস্থিতির ছবি তুলে ধরা হয়।
শহরের নলডাঙ্গা সড়কের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু।
এদিকে, শনিবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাকুলিয়ায় জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল হক মোল্লা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘নিহত মতব্বত আলী ও ইউনুছ আলী কখনও জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কখনোই হত্যার রাজনীতি করে না। কিন্তু গত ১১ জুন উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু নিহত ইউনুছ আলীকে জামায়াত কর্মী ও সন্ত্রাসী বলে দাবি করেন। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির জেলা ও উপজেলার একাধিক শীর্ষ নেতা নিহত ইউনুছ আলীকে বিএনপির কর্মী বলে উল্লেখ করেন। যার ভিডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশে নিহতের ভাই ইয়াকুব আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ভাই বিএনপি কর্মী হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভয়ে ১৬ বছর পালিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে এসে তার দল বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হলো।’
তিনি আরো বলেন আমরা ৪১ বছর ধরেই বা তারেক রহমানের পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই বিএনপি করে আসছি এমনকি আমরা পারিবারিকভাবে প্রথম জিয়াউর রহমানের ভোট প্রদান করি। এমনকি তার কথার স্বীকৃতি স্বরূপ চার চার বারের এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিনী মোরশেদা জামান বলেন এই পরিবার আমাদের মতই নির্যাতিত তারা পুরাতন বিএনপি করে এবং আমার পরিবারও বহুবার দলীয় কার্যক্রমে তাদের শরণাপন্ন হয়েছে।