হরিণাকুণ্ডুতে ধান-লতিকচুর সমন্বিত চাষ, কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

হরিণাকুণ্ডুতে ধান-লতিকচুর সমন্বিত চাষ, কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ধান-লতিকচুর সমন্বিত চাষে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ কৃষক শামীম উদ্দীন কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন। মাত্র ৮ শতাংশ জমিতে একই সঙ্গে লতিকচু ও ধান চাষ করে তিনি যেমন পেয়েছেন আশানুরূপ ফলন, তেমনি লাভবানও হয়েছেন। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এখন এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

কৃষিকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন তিনি। বরাবরই চেয়েছেন প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করতে। সেই চিন্তা থেকেই ইউটিউব ও কৃষি সংক্রান্ত ভিডিও দেখে লতিকচু চাষের ধারণা পান। পরে একই জমিতে ধান ও লতিকচু একসঙ্গে চাষ করেন। এতে খরচ কমেছে, আয় বেড়েছে। শামীমের এই উদ্ভাবনী চাষপদ্ধতি ইতোমধ্যে অন্যান্য কৃষকদেরও উৎসাহিত করছে। অনেকে তার দেখাদেখি আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

জানা যায়, শামীম উদ্দীন ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা তাহেহুদা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের মো. তৈয়ব আলীর ছোট ছেলে। তিনি হরিণাকুন্ডু প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৬ এসএসসি ও হরিণাকুন্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজ থেকে ২০১৮ এইচএসসি পাস করেন। বাবার অসুস্থতার কারণে লেখাপড়া শেষ না করেই কৃষি কাজে মনোযোগী হন।

সরেজমিনে দেখা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলা তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দী গ্রামের মাঠে ৮ শতাংশ জমিতে লতিকচুর জমিতে ধান চাষ করেছে শামীম। তার আশপাশে অন্যান্য জমিতে শুধু কচুর চাষ। কিন্তু তিনি নিজের চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন চাষাবাদের উদ্ভাবন করেছেন। সারি সারি কচু গাছের মাঝে তিন লাইন করে লাগানো হয়েছে ধান। ধানের ফলনও ভালো পেয়েছেন। আবার বাজারে লতিকচুর চাহিদা থাকায় অল্প জমি থেকে কয়েক হাজার টাকার লতি বিক্রয় করেছেন। কচু গাছের মধ্যে চাষ করা ধান কাটার পরও আগামী ৬ মাস ধরে লতি বিক্রয় করতে পারবেন শামীম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বারি-৬১ একটি উন্নত জাতের ধান, যা স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলন দেয়। আর লতিকচু অল্প পরিচর্যায় উৎপাদনযোগ্য সবজি। দুটো ফসলের সময় ও চাহিদা ভিন্ন হওয়ায় পাশাপাশি চাষে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি।

নারায়ণকান্দী গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শামীম অল্প পরিসরে কচুর জমিতে ধান চাষ করেছেন। কচুর জমিতে যে ধান চাষ করা যায়, তা শামীম করে দেখিয়েছেন। আশা করি তার দেখাদেখি আগামীতে অন্য কৃষকরা এই চাষে আগ্রহী হবেন।

কৃষি উদ্যোক্তা শামীম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর এই জমিতে শুধু লতিকচু চাষ করা হয়েছিল। ফলন ভালোই পেয়েছি। কিন্তু কচু গাছের লাইন বাই লাইন দূরুত্ব ছিল দুই হাত। লাইনের মাঝে অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে ছিল। তাই এবছর নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি। কচু গাছ লাগানোর ১০ দিন পর ধান লাগানো হয়েছে। কচু গাছে যে সার, কীটনাশক, সেচ দেওয়ার দরকার সেগুলোই দিয়েছি। বাড়তি কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। কচু লাগানোর দুই মাস বয়স পর থেকে লতি উঠানো শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৮ শতাংশ জমির থেকে ৮ হাজার টাকার লতি বিক্রয় করেছি। এখনো চার থেকে পাঁচ মাস ধরে লতি উঠাতে পারব। আবার সামান্য কিছু ধান কাটা হয়েছে, সেখানে পরিমাপ করে দেখা গেছে শতকে ১৫ থেকে ১৭ কেজি হারে ফলন হয়েছে। যেখানে শুধু ধান চাষ করলে শতকে ২০ থেকে ২৫ কেজি হারে ফলন পাওয়া যেতো।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে ধান ও লতি চাষ করে, যেমন খরচ বাঁচানো সম্ভব, তেমন করেই অল্প জমি থেকে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। আমি শুধু নিজের কৌশল কাজে লাগিয়েছি। তাতেই এমন সফলতা পেয়েছি। আগামীতে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই চাষ বৃদ্ধি করা হবে।

তাহেরহুদা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষক শামীম নিজেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে লতিকচু ও ধান চাষ করেছেন। তিনি পানির অপচয় না করে অল্প সার ব্যবহার করে চাষ করেছেন। তিনি একই সঙ্গে দুইটা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, ধানকখেতের সঙ্গে লতিকচু গাছ, যেটা আমরা দেখে অভ্যস্ত না। এখানে কৃষক নিজের উদ্যোগে, নিজেস্ব ভাবনা কাজে লাগিয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি কৃষক সফল হয়েছেন। একই জমিতে ধান গাছের সঙ্গে লতিকচু লাগিয়েছেন। ধান লাগানোর ঠিক ১০ দিন আগে একটু গ্যাপ দিয়ে লতিকচু লাগিয়েছেন। এটাতে সুবিধা হয়েছে, উনাকে অতিরিক্ত পানি খরচ করতে হয়নি। কচুখেতের জন্য যে পরিমাণ পানি দিয়ে থাকেন সেই পানিতেই তিনি ধান উৎপাদন করে নিয়েছেন। যার কারণে এখানে অতিরিক্ত সারেরও প্রয়োজন হয়নি। এটা তার জন্য খুবই সাশ্রয়ী এবং তার চমৎকার উদ্ভাবন।

তিনি বলেন, কৃষকের থেকে জানতে পেরেছি, ইতিমধ্যে এই জমি থেকে শতক প্রতি ১৬ থেকে ১৭ কেজি ধান ফলন পেয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮ শতাংশ জমি থেকে ৮ হাজার টাকার লতি বিক্রয় করেছে। এছাড়া আগামী ৫ থেকে ৬ মাস ধরে লতি বিক্রয় করতে পারবে। আশা করি আগামীতে এই উদ্ভাবন অন্যান্য কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে যাবে। আমাদের কৃষি অফিস তার সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

আরো পড়ুন
Oplus_0
আরো পড়ুন
IMG-20250901-WA0068
আরো পড়ুন
FB_IMG_1756717902020
আরো পড়ুন
Oplus_0
আরো পড়ুন
image-230031-1756710545
আরো পড়ুন
প্রবাসী রুবেলের অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া পরিবারে
আরো পড়ুন
Scroll to Top