মোজাহিদ হোসেন –
হরিণাকুন্ডুতে ‘দুর্নীতির পাহারাদার’ দুই কথিত সাংবাদিক! সামাদ আর রিপন। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব দুর্নীতির অভিযোগে নতুনভাবে জড়িত হয়েছেন দুজন কথিত সাংবাদিক—এম এ সামাদ ও নাজমুল হুদা রিপন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এরা কেউই অভ্যুত্থানের আগে সাংবাদিক ছিলেন না। জুলাই-আগস্টের পরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে হরিণাকুন্ডু প্রেসক্লাব দখল করে নেয় এবং নিজস্ব প্রভাব বিস্তার শুরু করে। জানা গেছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন চেয়ারম্যানদের দুর্নীতিকে আড়াল করে এরা মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করছে নিয়মিত। অভ্যুত্থানের পরপরই তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন এ অভিযোগকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।
বিশেষ করে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে টিআর-কাবিখা, ৪০ দিনের কর্মসূচি ও উন্নয়ন তহবিলের কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এসব প্রকল্প ঘিরেই তাদের মূল দৌরাত্ম্য শুরু।
সম্প্রতি, দুর্নীতির অনুসন্ধানে ঝিনাইদহ প্রেস ইউনিটির সভাপতি সাহিদুল এনাম পল্লব ২৩ জুন ভাইনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ঝিনাইদহ ফেরার পথে একটি অপরিচিত নম্বর (০১৭১১৩২৩৯৪৫) থেকে তার মোবাইলে কল আসে। কলদাতা হুমকিস্বরূপ জানায়, হরিণাকুন্ডুতে কোন তথ্য সংগ্রহে গেলে আগে আমাদের জানিয়ে যেতে হবে। আমরা এখানকার সব প্রকল্প দেখভাল করি।
পল্লব তাকে জানান, সাংবাদিকতার জন্য কোনও নির্ধারিত গণ্ডি নেই। তখন কথিত সাংবাদিক রিপন আরও স্পষ্ট করে বলেন, আপনি যদি জানতে চান আমি কে, তাহলে বিএনপির ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদের কাছ থেকে খোঁজ নিতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। যারা এসব প্রশ্ন করছে, আমার মনে হয় তাদের সাংবাদিকতা নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত। হরিণাকুন্ডুর কোনো দুর্নীতির তথ্য থাকলে আপনারা নির্ভয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন। দলের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি থাকবে না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে, তার দায় দল নেবে না।
স্থানীয়দের মতে, সাংবাদিকতার আড়ালে ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতিকে আড়াল করার এই সংস্কৃতি বন্ধ না হলে, হরিণাকুন্ডুর মতো উপজেলায় প্রকৃত সাংবাদিকতা চরম হুমকির মুখে পড়বে।