২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি: বাংলা প্রথম পত্র। নাটক: সিরাজউদ্দৌলা
আবু সায়েম মো. জামিল
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: ‘দৌলত আমার কাছে ভগবানের দাদামশায়ের চেয়ে বড়’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে উমিচাঁদের এ উক্তিতে অর্থের প্রতি তার লোলুপ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার অমাত্যদের অধিকাংশই ছিল অর্থলোভী ও বিশ্বাসঘাতক। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থলোভী ও ব্যক্তিত্বহীন ছিল উমিচাঁদ। অর্থের জন্য তিনি একেক সময় একেকজনের পক্ষ নিতেন। ঘসেটি বেগমের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে উমিচাঁদ জানান যে, তিনি দৌলতের পূজারি। কারণ দৌলত বা অর্থ তার কাছে ‘ভগবানের দাদামশায়ের চেয়েও বড়।’ এই অর্থের জন্যই তিনি নবাবকে ছেড়ে শওকত জঙ্গকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করতে চান। একেকজন একেকরকম চাইলেও উমিচাঁদের চাওয়া শুধু অর্থ।
প্রশ্ন: ‘ফরাসিরা ডাকাত আর ইংরেজরা অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি কেমন?’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ফরাসিরা আর ইংরেজরা অর্থাৎ বিদেশি বেনিয়ারা যে এ দেশে এসেছে মূলত বাণিজ্য করার নামে অবাধলুণ্ঠন করতে, সিরাজউদ্দৌলা সে প্রসঙ্গেই এ কথা বলেছেন।
ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নিষেধ সত্ত্বেও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। ইংরেজদের এই নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করে নেন এবং ওয়াটসন ও হলওয়েলকে বন্দি করেন। বন্দিদের কাছে নবাবের নির্দেশ অমান্যের কারণ জানতে চাইলে হলওয়েল জানান, তারা ফরাসিদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য দুর্গ নির্মাণ করছিলেন। হলওয়েলের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নবাব কটাক্ষ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। ফরাসিরা ডাকাত হলে ইংরেজরাও নিশ্চয় ভালো কিছু নয়, সেটি নবাব ভালোই জানতেন।
প্রশ্ন: ‘ওর লোভের অন্ত নেই।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে উমিচাঁদের লোভী মানসিকতা প্রসঙ্গে গভর্নর রজার ড্রেক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
ব্যক্তিত্বহীন উমিচাঁদ ছিলেন প্রচণ্ড অর্থলোভী একজন মানুষ। অর্থের বিনিময়ে তিনি ইংরেজদের পক্ষে সব কাজ করার আগ্রহের কথা জানান; আবার অর্থ পেলে তলে তলে তিনি নবাবের হয়েও কথা বলেন। তার এ সবকিছু অর্থ উপার্জনের কৌশল মাত্র। ইংরেজদের কলকাতায় ব্যবসা করার জন্য মানিকচাঁদের হুকুমনামা আনতে উমিচাঁদ মধ্যস্বত্বভোগীর কাজ করেন। তিনি মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দাবি করেন ড্রেকের কাছে। উমিচাঁদের এমন স্বভাব নতুন কিছু নয়, সে প্রসঙ্গেই ড্রেক কথাটি বলেছিলেন।
প্রশ্ন: ‘শওকত জঙ্গ নবাব হলে সবার উদ্দেশ্য হাসিল হবে’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক থেকে জানা যায় শওকত জঙ্গ ঘসেটি বেগমের আস্থাভাজন হওয়ায় সে নবাব হলে ষড়যন্ত্রকারীদের স্বার্থসিদ্ধি ঘটবে, ওয়াটসনের উক্তিতে এ কথা বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
আলীবর্দী খাঁ’র মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু খালা ঘসেটি বেগমসহ অন্য চক্রান্তকারীরা এটি মেনে নিতে পারেননি। তারা সিরাজউদ্দৌলার খালাতো ভাই শওকত জঙ্গকেই যোগ্য উত্তরাধিকারী মনে করেন। কেননা, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে, প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ফলে ঘসেটি বেগমের পুত্র শওকত জঙ্গকে নবাব বানাতে পারলে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় কোনো অন্তরায় থাকবে না বলে মনে করে ষড়যন্ত্রকারীরা। এ কথা উমিচাঁদের চিঠিতে উল্লেখ থাকায় ড্রেক উচ্ছ্বসিত হয়ে বিষয়টি সবাইকে জানান।
প্রশ্ন: ‘ইংরেজদের আধিপত্য অত সহজেই মুছে যাবে নাকি?’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথম অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে ড্রেকের এই উক্তিটি দিয়ে ইংরেজদের সুকৌশলী কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়েছে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার তাড়া খেয়ে ইংরেজরা কলকাতা দুর্গ ছেড়ে পালায়। তারা ভাগীরথী নদীতে ভাঙা ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নিলে সেখানে খাদ্য-বস্ত্রের সংকট দেখা দেয়। জুনিয়র অফিসার মার্টিন ও হ্যারি তাদের দুরবস্থার জন্য ড্রেককে দায়ী করেন। তখন ড্রেক দাম্ভিকতার সঙ্গে ইংরেজদের আধিপত্যের স্থায়িত্বের কথা বলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। গভর্নর ড্রেক ঠিকই জানতেন ইংরেজরা এত সহজে কলকাতা থেকে যাবে না; এমনকি আবারও তারা কলকাতায় ফিরে আসবেন, দখলদারত্ব বজায় রাখবেন।