চীনের সিএসসি বৃত্তি: বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দারুণ সুযোগ

চীনের সিএসসি বৃত্তি: বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দারুণ সুযোগ

মেজবাউর রহমান

চীনের সিএসসি বৃত্তি: বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দারুণ সুযোগ। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চীন সরকার যে শিক্ষা সহায়তা দিয়ে আসছে, তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি হলো চাইনিজ সরকারি বৃত্তি, যা সিএসসি বৃত্তি নামে পরিচিত। এই বৃত্তির আওতায় চীনের সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশটির ২৮০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। আজ জানব সিএসসি বৃত্তির আদ্যোপান্ত।
সিএসসি (China Scholarship Council) হচ্ছে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি সংস্থা। সংস্থাটির মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সার্বিক দিক দেখাশোনা করা হয়ে থাকে। এই বৃত্তির মাধ্যমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা চীনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে পারেন।

বৃত্তির সুবিধাগুলো

চাইনিজ সরকারি বৃত্তি পেলে সাধারণত নিম্নোক্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়-

  • পুরো টিউশন ফি মওকুফ
  • বিনামূল্যে আবাসন বা আবাসনের জন্য ভাতা
  • মাসিক ভাতা (স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ২৫০০ ইউয়ান, মাস্টার্সে ৩০০০ ইউয়ান এবং পিএইচডিতে ৩৫০০ ইউয়ান)
  • স্বাস্থ্য বিমা
  • আবেদনের যোগ্যতা
  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
  • অন্য কোনো বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়া যাবে না।
  • স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস এবং বয়স অবশ্যই ২৫-এর চেয়ে কম হতে হবে।
  • স্নাতকোত্তরে আবেদনের জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং বয়স অবশ্যই ৩৫-এর চেয়ে কম হতে হবে।
  • ডক্টরালে আবেদনের জন্য উচ্চ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং বয়স অবশ্যই ৪০-এর চেয়ে কম হতে হবে।
  • তবে মনে রাখা প্রয়োজন, স্নাতকে এই বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলে অবশ্যই চাইনিজ মাধ্যমে পড়তে হবে। ইংরেজিতে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে স্নাতকোত্তরে ইংরেজি এবং চাইনিজ দুই মাধ্যমেই পড়ার সুযোগ আছে।
আবেদনের সময়সীমা

আবেদন শুরু হয় সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আর শেষ হয় জুন-জুলাইয়ের দিকে। তবে বিস্তারিত জানতে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে হবে। https://studyinchina.csc.edu.cn/আপনি অবশ্য বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। তার জন্য নিচের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে। http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship
আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রতি বছরই প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
যে দেশের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য
চাইনিজ সরকারি বৃত্তির জন্য বিশ্বের যেকোনো দেশের সুস্থ নাগরিক আবেদন করতে পারেন।

আবেদন প্রক্রিয়া

এই বৃত্তির জন্য আবেদন করার উপায় দুটি-
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (টাইপ-এ: সর্বোচ্চ ২টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ)
চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (টাইপ-বি: সর্বোচ্চ ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ)
টাইপ-এ’তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় এবং টাইপ-বি’তে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়।
প্রথম পদ্ধতি: সব কাগজপত্র ও আবেদনপত্র জমা দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ের পর সব কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে চাইনিজ এম্বেসিতে এবং সেখানে আপনাকে ভাইভা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সাবজেক্টে আবেদন করা যায়। আর অ্যাডমিশনের কাজ শেষ হলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এখানে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার এইচএসসির ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ভালো কোনো শিক্ষকের প্রশংসাপত্র, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ এবং চাইনিজ ভাষা জানা থাকলে আপনার সুযোগ বেড়ে যাবে। তবে ভাইবাও একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল হতে একটু দেরি হয়। সাধারণত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: প্রথমেই আপনাকে চাইনিজ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে হবে এবং দেখে নিতে হবে এসব বিশ্ববিদ্যালয় চাইনিজ সরকারি বৃত্তি (সিজিএস) দেয় কি না। যারা এই মাধ্যমে আবেদন করতে চান তারা নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তথ্য খোঁজা শুরু করুন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের আবেদনের প্রক্রিয়া, রিকোয়ারমেন্ট দেখলে আপনি নিজেই সবকিছু বুঝে যাবেন। চীনের অধিকাংশ ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাইনিজ সরকারি বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। এরপর সব কাগজপত্র ও আবেদন ফরমসহ আবেদন করতে হবে বৃত্তির জন্য। এবার সব কাগজপত্র কুরিয়ার করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় আর যদি অ্যাপ্লিকেশন ফি দেওয়ার প্রয়োজন হয় তবে সেটাও দিতে হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফলাফল দিলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার ক্ষেত্রে https://www.topuniversities.com/universities/region/asia/country/china অথবা http://www.campuschina.org/ এই ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন।

বৃত্তি প্রাপ্তির জন্য আপনাকে জমা দিতে হবে
  • অ্যাপ্লিকেশন ফরম
  • পাসপোর্টের কপি
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • সব একাডেমিক সনদের নোটারাইজ কপি
  • স্টাডি প্ল্যান
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রফেসরের কাছ থেকে সুপারিশপত্র নিতে হবে
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • আইইএলটিএস বা টোফেল পরীক্ষার সনদ।চাইনিজ সরকারি এই বৃত্তি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণের দারুণ সুযোগ। যারা কম খরচে বা সম্পূর্ণ খরচবিহীন বিদেশে পড়াশোনা করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ মাধ্যম হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে চেষ্টা করলে এই বৃত্তি পাওয়া সম্ভব। সূত্র: https://studyspice.com/
  • লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
Scroll to Top