ডেক্স রিপোর্ট:
দেশের খ্যাতনামা আইনজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার জুনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর তিনি যুক্তরাজ্য থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রায় এক যুগ পর ফিরে সুপ্রিম কোর্টে পুনরায় আইন পেশায় সক্রিয় হন এই অভিজ্ঞ ব্যারিস্টার। দেশে ফেরার পর ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বারের তরফ থেকে তাকে এক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান এবং ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। সেই সময় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার পদত্যাগে দুঃখ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে মহব্বতের সম্পর্ক অটুট রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরবর্তীকালে ব্যারিস্টার রাজ্জাক “আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি”-তে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেন।
দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমি কেবল একজন আইনজীবী। আইনের অঙ্গনেই আমি থাকব, আইন ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”
১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রির পর ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করেন। লন্ডনে তিনি আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে, ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য ল’ কাউন্সেল’ নামক আইনি ফার্ম।
ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক। তার দুই পুত্রই ব্যারিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।
দেশের বিচার অঙ্গনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।