অনলাইন ডেস্ক:
মাত্র ৪ মাসের ফুটফুটে শিশু সন্তানকে মায়ের হৃদয়ে ঠাঁই হয়নি। স্বামী-সংসারের সঙ্গে কলহের জেরে লাবনী আক্তার লিজা নামের এক নারী নিজের কোলের ধনকে বিক্রি করে দেন মাত্র ৪০ হাজার টাকায়! টাকাগুলো খরচ করেন মোবাইল ফোন, গহনা ও জুতা কিনে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর শহরের পুন্ডুরা শেওড়াতলা এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে গোপালপুর উপজেলার বলাটা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে লাবনীর সঙ্গে মধুপুরের রবিউল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক অভাব-অনটন ও স্বামীর আর্থিক দুরবস্থার কারণে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর মধ্যেই জন্ম হয় তাদের একমাত্র পুত্রসন্তান। শিশুটির পিতা রবিউল ইসলাম জানান, “ছেলের জন্মের পর কিছুদিন শান্তিতে কাটলেও হঠাৎ করেই লাবনী ছেলেকে নিয়ে তার বোনের বাড়ি ভূঞাপুরে চলে যায়। তারপর আমি বারবার অনুরোধ করেও তাকে ফেরাতে পারিনি। এমনকি ছেলে অসুস্থ বলে জানিয়েও তাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।” রবিউল বলেন, “হঠাৎ খবর পেলাম, আমার ছেলেকে সে বিক্রি করে দিয়েছে। এরপর কৌশলে লাবনীকে ভূঞাপুর থেকে পাকুটিয়ায় ডেকে এনে বাড়িতে ফিরিয়ে আনি। তখন সে নিজ মুখে স্বীকার করে, ৪ মাসের ছেলেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।” এরপর দ্রুত পুলিশকে জানানো হলে মধুপুর থানার ওসি মো. এমরানুল কবীরের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। জবানবন্দিতে শিশুটির মা লাবনী বলেন, “আমার মাথা ঠিক ছিল না। মনির নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় ১০ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের এক লোকের কাছে ছেলেকে বিক্রি করি। সেই টাকা দিয়ে মোবাইল, নূপুর ও নাকফুল কিনেছি। এখন খুব অনুতপ্ত। বুঝতে পারছি, বড় ভুল করেছি।” এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে চরম ক্ষোভ ও বিস্ময়ের ছায়া। স্থানীয়দের মতে, “মা শব্দটি ভালোবাসা, ত্যাগ আর আত্মত্যাগের প্রতীক। কিন্তু লাবনীর মতো মায়েরা এই পবিত্র শব্দটিকেই কলঙ্কিত করছে।” মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনার পর পরই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করি। বর্তমানে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।” মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেওয়া এই ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সমাজের প্রতিটি স্তর থেকেই উঠছে প্রশ্ন—মা কি সত্যিই এমন হতে পারে?