মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তি

ডেক্স রিপোর্ট:

প্রায় ১২ বছর কারাভোগের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পেয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর মাধ্যমে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এক আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। আজহারের আইনজীবীরা রায়কে ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার এক নেতার মুক্তির পথ খুলে দেওয়ার নজির হিসেবে অভিহিত করেছে।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারের নিজ বাসা থেকে আটক হন এটিএম আজহারুল ইসলাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার। প্রায় পাঁচ বছর পর, ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এরপর তিনি রিভিউ আবেদন করেন, যার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ। সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই ফের আবেদন করেন তিনি।

২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালত রিভিউ শুনে আবারো আপিল শুনানির অনুমতি দেয়— যা ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম নজির, যেখানে রিভিউর পর আবার আপিল শুনানি হয়েছে।

অবশেষে ২০২৫ সালের ৮ মে শুনানি শেষ হয় এবং আজ, ২৭ মে, আপিল বিভাগ তাকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

আজহারুল ইসলাম ২০১২ সালের আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত টানা ১২ বছর কারাগারে ছিলেন। তিনি কোনো সাজা ভোগের সুযোগ না পেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় দিন কাটিয়েছেন।

আজহারের পক্ষে আপিল শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। শিশির মনির বলেন, “এটা ন্যায়বিচারের জয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এক মামলায় একজন নির্দোষ মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।”

জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে জানায়, “আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি। এই রায় প্রমাণ করে, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলার জাল বেশিদিন টেকে না। আমরা মনে করি, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

এটিএম আজহারুল ইসলামের এই খালাস বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়ার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ কারাবাস, আইনি লড়াই এবং অবশেষে মুক্তি— এই যাত্রা যেমন একজন ব্যক্তির জীবনের চরম বাস্তবতা, তেমনি দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্যও এক বড় বার্তা।

Scroll to Top