শেখ জিল্লুর রহমান
ঝিনাইদহ-৪ আসনে ফিরোজের হাতেই থাকছে ধানের শীষ? ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজকেই চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দলীয় উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, শরিক দলের পক্ষ থেকে এ আসনে কোনো শক্তিশালী বা জনপ্রিয় প্রার্থী না থাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ফিরোজকেই সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ঝিনেদার কাগজ-কে জানায়, ফিরোজের বিপরীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ এবং সাবেক এমপি এম শহীদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মুর্শিদা জামান বেল্টু। তবে তারা তুলনামূলকভাবে সংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ায় দল চূড়ান্তভাবে ফিরোজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। সাহাবুদ্দীন লাল্টু-আজিজুল বারী হেলাল কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তার শক্তিশালী যোগাযোগই তাকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে।
দলীয় মহলে ফিরোজকে এগিয়ে রাখার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। দীর্ঘদিনের ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক রাজনীতির অভিজ্ঞতা তাকে সংগঠনের কেন্দ্র ও তৃণমূলের মধ্যে এক কার্যকর সেতুবন্ধন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পাশাপাশি প্রচার দক্ষতা ও দলীয় বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনায় তার সংগঠনিক উপস্থিতি বেশি হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থাও অর্জন করেছেন তিনি।
বিএনপি মনে করছে, ফিরোজের মতো একজন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা মানে শুধু একটি উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, বরং দলটি একটি জাতীয় রাজনৈতিক বার্তা দিতে চায়— “সংগঠিত বিএনপি আবার মাঠে ফিরছে”।
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনটিকে বিএনপি তাদের ‘হারানো দুর্গ’ পুনরুদ্ধারের অন্যতম বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিন দফা বিএনপির দখলে থাকা এ আসনটি ২০০৮ সালের নির্বাচনে চলে যায় আওয়ামী লীগের হাতে।
আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। এর পরপরই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। সেই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপ্রধান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালে নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিকে সংগঠিতভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিএনপি আবারও এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারে।
দলীয় নেতৃত্বের মতে, এই নির্বাচন হবে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এবং ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রস্তুতির একটি ‘পাইলট প্রজেক্ট’।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা ও শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ধানের শীষ প্রতীকের চূড়ান্ত দাবিদার হিসেবে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন। দলের ভেতরে ইতিমধ্যে তার মনোনয়ন নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে তরুণ ভোটারদের মধ্যেও ফিরোজকে ঘিরে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, উপনির্বাচনে শিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ ও ইনসাফে বিশ্বাসী প্রার্থী হিসেবে ফিরোজই এ এলাকার যোগ্য প্রতিনিধি হতে পারেন।