ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
জামায়াতের কার্যালয়ে সরকারি সার-বীজ উদ্ধারের নাটক: বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মব সৃষ্টি’র অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জামায়াত নেতা ও কিছু এলাকাবাসী। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় থেকে সরকারি প্রণোদনার সার ও বীজ উদ্ধারের নামে স্থানীয়ভাবে ‘মব সৃষ্টি’ করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুরাট ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির। তিনি জানান, কৃষকদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে সার ও বীজগুলো রাখা হয়েছিল। কিছু অংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং সময়ের অভাবে বাকি সার ও বীজ সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ সম্পন্ন হয়নি, যা দ্রুতই করার কথা ছিল।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ভিন্ন মোড় নেয়। স্থানীয় জামায়াত আমিরের অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় বিএনপির কিছু ‘কুচক্রী নেতার যোগসাজশে’ মধ্যরাতে কিছু স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে জামায়াত কর্মীদের ‘চোর প্রমাণের জন্য’ মব সৃষ্টি করে সার উদ্ধারের নাটক তৈরি করেছে। এই ঘটনা গণমাধ্যমেও সমানভাবে প্রচারিত হচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা জামায়াতের আমির ড. হাবিবুর রহমান বলেন, এই সারগুলো বিতরণ করতে করতে রাত হয়ে গিয়েছিল। তাই অফিসে রাখা হয়েছিল। আজ শনিবার সকালে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা কৃষি বিভাগকে অবহিত করে বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রচার করছে। এগুলো আত্মসাৎ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে রাখা হয়নি।
উদ্ধারের বিষয়ে বক্তব্য:
অডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, সুরাট ইউনিয়নের জামায়াতের ইউনিয়ন কার্যালয়ে সরকারি সার ও বীজ মজুদ রাখার খবর ছড়ালে স্থানীয় কৌতূহলী জনতা ভিড় জমাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সেখানে সদর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, জনাব জুনাইদ হাবিব, উপস্থিত হন। জামায়াতের অফিস খোলার পর সেখানে আট প্যাকেট সরিষার বীজ, চার বস্তা ডিএপিও, চার বস্তা পটাস, এক বস্তা এমওপিও এবং ১৯ কেজি মসুরির বীজ পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত কৃষি অফিসার জুনাইদ হাবিব নিশ্চিত করেন যে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত সার বা বীজ কোনোভাবেই রাজনৈতিক কার্যালয়ে মজুদ রাখার নিয়ম নেই এবং এখানে ‘পুরোপুরি অনিয়ম করা হয়েছে’। তিনি জানান, সার ও বীজগুলো কাদের জন্য বরাদ্দ ছিল, সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
জামায়াত নেতাদের পাল্টা দাবি:
এদিকে, সুরাট ইউনিয়নের জামায়াত নেতারা উদ্ধার নাটকের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। স্থানীয় জামায়াত নেতা আলমগীর হোসাইন বলেন, জামায়াত কৃষকের মাঝে বীজ ও সার যথাযথভাবে বন্টন করছে এবং যারা উপজেলা থেকে নিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করে, তারাই জামায়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। তিনি এই ঘটনাকে ‘অপবাদ’ এবং ‘স্থানীয় জামায়াতের জনপ্রিয়তা কমানোর হীন চেষ্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
স্থানীয় জামায়াত আমিরের দাবি, মালগুলো বিতরণের জন্য রাখা হয়েছিল এবং কিছু বিতরণও হয়েছে। জনৈক লিয়াকত আলী, যিনি নিজেকে সুরাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন, অডিওতে বলেছেন যে মাগরিবের আজানের সময় থেকেই তারা লোকজনকে ভ্যান নিয়ে মাল সরিয়ে নিতে দেখেছেন। তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “এই মাল কেন নিয়ে আসলো, গোপনে নিয়ে আসলো, কোথা থেকে নিয়ে আসলো, কে দিয়েছে এবং কেন আসলো?”
তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে সার ও বীজগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য রাখা হয়েছিল। স্থানীয় সান্ত সর্দার নামের এক ব্যক্তি বলেন, জামায়াত ইসলাম বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে বিনামূল্যে জিনিস বিতরণ করে এবং ওখানেও একই ধরনের কিছু করার জন্য রাখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সরকারি মাল চুরি করে গোডাউনে মজুদ রাখলে কোনো ভূমিকা দেখা যায় না, বরং দলীয় স্বার্থে এ ধরনের ‘নাটক’ তৈরি করা হয়।
পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক:
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘বিপুল পরিমাণ’ সার ও বীজ উদ্ধারের কথা প্রচারিত হলেও, সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাত্র সাত প্যাকেট সরিষার বীজ, মসুরির বীজ ও চার বস্তা সার সেখানে পাওয়া গেছে। যদিও অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মোট আট প্যাকেট সরিষার বীজসহ অন্যান্য সামগ্রী পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত কৃষি অফিসার জুনাইদ হাবিবকে এ বিষয়ে সুরাট ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জামায়াত নেতারা দাবি করেছেন, এ ধরনের নাটক করে কোনো দলের ভোট বাড়ানো যায় না, বরং এতে ভোট আরও কমে যায়।