হার্ট অ্যাটাকে চিকিৎসা কখন কী

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে চিকিৎসা কখন কী

হার্ট অ্যাটাকে চিকিৎসা। অফিস আছেন, হঠাৎ শুরু হলো বুকে ব্যথা! শরীর ঘামছে। সহকর্মীরা দেরি না করে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলেন। ইসিজি করে দেখা গেল, বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ধরন দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারলেন, বড় ধমনিটি বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় কি করবেন তার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ঢাকা ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও সিসিইউ ইনচার্জ ডা. মাহবুবর রহমান

এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কার্যকর ও আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি হলো জরুরি ভিত্তিতে অ্যানজিওগ্রাম করে তৎক্ষণাৎ ব্লক অপসারণ করে স্টেন্ট, অর্থাৎ রিং বসিয়ে দেওয়া, যাতে হার্টের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ পুনঃস্থাপিত হতে পারে। একে বলা হয় প্রাইমারি পিসিআই।

কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়; কখনো রোগীর আত্মীয়স্বজন সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। মনে করেন, হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ দিয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে পরে অ্যানজিওগ্রাম করা যাবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ইসিজির ধরন অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাককে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। প্রথমটি এসটি ইএমআই (STEMI)। এ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের একটি বড় রক্তনালি জমাট রক্ত দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হার্টে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালি খুলে না দিলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি স্থায়ীভাবে ধ্বংস হতে পারে। হার্ট ফেইলিউর, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টসহ নানা মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। দ্বিতীয়টি নন–এসটিইএমআই (NON STEMI)। এ ক্ষেত্রে হার্টের কোনো না কোনো রক্তনালি সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ হয়ে মাংসপেশির ক্ষতিসাধন করে। সাধারণত এক বা একাধিক ব্লক থাকে এবং প্রায়ই কিছু না কিছু ন্যাচারাল বাইপাস তৈরি হয়ে কিছু রক্ত সরবরাহ বজায় থাকে। এ ধরন কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসার ধরনও দুই রকম।

চিকিৎসা

১. এসটিইএমআই হার্ট অ্যাটাক হলে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দিতে হবে। এর সবচেয়ে আধুনিক ও কার্যকর উপায় হলো জরুরি ভিত্তিতে অ্যানজিওগ্রাম করে কোথায় ব্লক হয়েছে, তা শনাক্ত করে সেটি অপসারণ করা। ব্লক অপসারণের জন্য ধাতব জালের একটি সরু পাইপ বা স্টেন্ট (হার্টের রিং নামে পরিচিত) অ্যানজিওগ্রাম করে বসিয়ে দেওয়া হয়। একে প্রাইমারি অ্যানজিওপ্লাস্টি বলা হয়। এ ক্ষেত্রে সাফল্য প্রায় ৯৫ শতাংশ।

এ পদ্ধতির চিকিৎসায় হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি রক্ষা পায়। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বজায় থাকে। পরবর্তী সময়ে হার্ট ফেইলিউর থেকে রোগীকে সুরক্ষা দেয়। তবে জরুরি অ্যানজিওপ্লাস্টির সুযোগ–সুবিধা সবখানে নেই। তাই কখনো কখনো প্রত্যন্ত এলাকায় বা যদি রোগীর অবস্থান থেকে হাসপাতালের দূরত্ব দুই ঘণ্টার বেশি হয়, তবে আগে ওষুধ দিয়ে ব্লক খুলে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেনেকটিপলেজ সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ। এর বিকল্প হলো স্ট্রেপটোকাইনেজ। তবে যা–ই ব্যবহার করা হোক না কেন, এগুলো পুশ করার ২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যানজিওগ্রাম করতে হবে। এতে ব্লকের উপস্থিতি ধরা পড়লে তা অপসারণ করে রিং পরাতে হবে।

২. নন–এসটিইএমআই হার্ট অ্যাটাক তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও যত দ্রুত সম্ভব অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লকের অবস্থান, মাত্রা ও ব্যাপ্তি নির্ণয় করে পরবর্তী চিকিৎসা করতে হবে।

কেন সব সময় সম্ভব হয় না

চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি প্রধান সংকট হলো আস্থার অভাব। উপযুক্ত পরামর্শ, রোগ ও চিকিৎসার অনুপুঙ্খ ব্যাখ্যা তুলে ধরা জরুরি। রোগীর পক্ষের লোকজনেরও দায় কম নয়। হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত হাসপাতালে নিলে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত

Scroll to Top