বনি আমিন, কালীগঞ্জ:
কালীগঞ্জে বিএনপি নেতা ইউনূস বিশ্বাস ও মহব্বত আলী বিশ্বাসের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে সংঘটিত এক নির্মম ও বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বিএনপি নেতা ইউনূস বিশ্বাস ও মহব্বত আলী বিশ্বাসের রুহের মাগফেরাত কামনায় এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জ পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই মাহফিলে কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জামাল ও কোলা ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে মাহফিলটি আবেগঘন ও প্রতিবাদপ্রবণ রূপ নেয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হামিদুল ইসলাম হামিদ। সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম রবি, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সাবেক ছাত্র নেতা আশরাফুজ্জামান লাল, উপজেলা যুবদলের সদ্যসাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মিলন, ছাত্রদলের প্রবীণ নেতা বাবুল আক্তার এবং নিহতদের মেজো ভাই ইয়াকুব আলী বিশ্বাস।
দোয়া মাহফিলে বক্তারা শুধু দোয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ন্যায়বিচারের জোর দাবি তোলেন। প্রধান অতিথি হামিদুল ইসলাম হামিদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “খুন করে রাজনীতি করতে হবে, মানুষের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করতে হবে এমন রাজনীতি আমরা করি না, করিনি এবং ভবিষ্যতেও করবো না। আমার দলের একজন কর্মীও যদি আমার দ্বারা নিহত হয়, তবে সেই রাজনীতি আমি ঘৃণা করি। ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের রাজনীতি বিএনপির আদর্শ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির আপসহীন নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। দেশনায়ক তারেক রহমান ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। ১৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েও তাঁরা কোনোদিন ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছে মাথা নত করেননি।” তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “বর্তমানে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, দলের নাম ভাঙিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা করছেন তাদের অচিরেই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান, “ইউনূস ও মহব্বতের রক্ত যেন বৃথা না যায়। এই রক্তকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। আমাদের দুর্বার আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। যতদিন হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত রাজপথে আমাদের অবস্থান হতে হবে দৃঢ় ও সংগ্রামী।”
একইসাথে তিনি আরও বলেন, “তবে মনে রাখতে হবে, এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ এবং আইনানুগ পথে আমরা প্রতিবাদ করে যাব।” এই দোয়া মাহফিল শুধু একটি ধর্মীয় আয়োজনে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল এক প্রকার রাজনৈতিক অবস্থান, প্রতিবাদ এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার ঘোষণাপত্র, যেখানে রাজনীতি থেকে সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র নির্মূলের জন্য বিএনপির সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্য ও অঙ্গীকার পুনরায় উচ্চারিত হয়েছে।