কালীগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর নেতার মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া

কালীগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর নেতার মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া

বনি আমিন কালীগঞ্জ

কালীগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর নেতার মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক সেক্রেটারি এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কালীগঞ্জ শাখার সাবেক সভাপতি আজিজ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৫৫ বছর। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘকাল ধরে তিনি জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন, যা অতীতের রাজনৈতিক হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের পরিণতিস্বরূপ বলে ধারণা করা হয়।

আজিজ ১৯৯২-৯৩ সনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কালীগঞ্জ থানা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কালীগঞ্জ থানা সেক্রেটারি এবং দুই বছর নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দলীয় মনোনয়নে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘বই’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৬ সাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের ভাষ্যমতে, এসব নিপীড়ন পরবর্তীতে তাঁর স্বাস্থ্যগত অবনতি এবং বহুবিধ জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজিজ শুধুমাত্র একজন রাজনীতিক নন, বরং তিনি একজন শিক্ষাবিদ হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। তিনি চাঁচড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তাঁর উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। মৃত্যুর পর বাদ আসর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং পরে তাঁর নিজ গ্রাম চাঁদবা একতারপুরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাবেক সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।

ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আজম মো. আবু বকর বলেন,“আজিজ ছিলেন কর্মনিষ্ঠ, সুসংগঠিত ও আত্মত্যাগী একজন নেতা। তিনি আদর্শ ও দায়িত্ববোধের প্রতীক ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

জেলা সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল বলেন, “সংগঠনপ্রেম, নৈতিকতা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন আজিজ। তিনি নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন, অথচ তাঁর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।”

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবু তালেব বলেন, “আজিজ ছিলেন আদর্শনিষ্ঠ সংগ্রামী। রাজপথে, মঞ্চে কিংবা নিভৃতচিন্তায় তিনি কখনও আদর্শচ্যুত হননি। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন পরীক্ষিত ও দৃঢ়চিত্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

আজিজের মৃত্যুর খবরে কালীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন মহল ও সংগঠন শোকবার্তা প্রকাশ করেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

Scroll to Top