ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
কালো ধোঁয়ার তাণ্ডব: জনজীবন বিপন্ন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতা। ঝিনাইদহের সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে জনজীবন ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টভোগীদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এখনও ব্যর্থ।
সড়কে কালো ধোঁয়া থেকে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, জরুরি, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অন্তত ২০-২৫ শতাংশই ধোঁয়া ও ধুলাদূষণের শিকার।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুস সালাম বলেন, “সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় কার্বন পার্টিকেল, সালফার ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ফুসফুস, নাক ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।”
তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে একটিও অভিযান পরিচালনা করেনি। অন্যদিকে, বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ২,৩৪১টি গাড়ির ফিটনেস নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৭৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে ৪৮২টি মামলা ও সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
গত সপ্তাহে ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক এবং জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো পরিদর্শন করলে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক কালো ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন চলাচল করছে, যার মধ্যে ট্রাক ও ভারী বাসের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
শহরের রামপুর মোড় এলাকায় রিকশায় বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, “ট্রাক ও বাস থেকে ধোঁয়া ছাড়লে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মাঝে মধ্যে হাঁফরাশি এমনভাবে বাড়ে যে রাস্তা পার হওয়াও কঠিন হয়ে যায়।”
অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সেলিম উদ্দিন জানান, “কালো ধোঁয়ায় মানুষ ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে। কিন্তু যাদের দায়িত্ব, তারা এখনও উদাসীন।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাশেদ হোসেন বলেন, “আমরা যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন জব্দসহ অভিযান চালাই। তবে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব আমাদের।”
বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এস এম আজম জানিয়েছেন, “ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাই, মামলা ও জরিমানা করি। তবে ধোঁয়া ও বাতাস দূষণের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব। তাদের কাছে দূষণ পরিমাপের যন্ত্র ও বিশেষজ্ঞ রয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, “যানবাহনের কালো ধোঁয়া শুধু শারীরিক ক্ষতি করছে না, শহরের পরিবেশকেও নষ্ট করছে। দ্রুত ও যৌথ উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে সমস্যা অব্যাহত থাকবে।”