গাজীকালু চম্পাবতী মাজার

বারোবাজারে গাজী কালু চম্পাবতী মাজার

শেখ জিল্লুর রহমান

বারোবাজারে গাজী কালু চম্পাবতী মাজার। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার একটি ঐতিহাসিক স্থান। গাজী কালু চম্পাবতী মাজার (Gazi Kalu Champabati Mazar) অবস্থিত। কথিত আছে এ এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আসা গাজী, কালু ও চম্পাবতী ছিলেন অন্যতম।

শাহ গাজী,কালু ও চম্পাবতীর পরিচয় নিয়ে আছে নানা কিংবদন্তী ইতিহাস। লোকমুখে প্রচারিত আছে বৈরাগ নগরের শাসক দরবেশ শাহ সিকান্দারের পুত্র শাহ গাজী। কালু ছিলেন শাহ সিকান্দারের পোষ্য পুত্র। আর চম্পাবতী ছিলেন সাপাই নগরের সামান্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার কন্যা। এক পর্যায়ে শাহ গাজীর সাথে চম্পাবতির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তাদের বিবাহের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক ও ধর্মীয় বাধা। কিন্তু শাহ গাজী কালুর খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে রাজা মুকুট রায়কে পরাজিত করে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজারে। মৃত্যু পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন।

লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, বিরাট নগরের শাসক দরবেশ শাহ্‌ সিকান্দারের পুত্র বরখান গাজী ও কালু ছিলেন সিকান্দারের পালক পুত্র। বরখান গাজী সিলেট থেকে সুন্দরবন হয়ে গাজী নামে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। গাজীর সঙ্গে ছাপাইনগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর প্রেমের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাড়ায় তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা। মুকুট রাজা গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করার জন্য তার সেনাপতি দক্ষিণা রায়কে হুকুম দেন। যুদ্ধে সেনাপতি দক্ষিণা রায় পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গাজীর অনুসারির কাছে রাজা রামচন্দ্র পরাজিত হয়ে চম্পাবতীকে নিয়ে তার প্রধান বাড়ি ঝিনাইদহের বাড়িবাথানে চলে যান।

পরবর্তীতে গাজী অনুসারীরা রাজা রামচন্দ্রের সঙ্গে বহু খণ্ড যুদ্ধের মাধ্যমে গাজী চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজারে ফিরে আসেন এবং বারোবাজারে তারা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রীরাম রাজার বেড় দীঘির দক্ষিণ পাড়ের আট ফুট লম্বা তিনটি কবরের মধ্যে মাঝেরটি গাজীর, পশ্চিমেরটি কালুর ও পূর্ব দিকের কবরটি চম্পাবতীর বলে পরিচিত জনশ্রুতি আছে। এছাড়া গাজী কালু চম্পাবতী মাজারের কাছে আছে সেনাপতি দক্ষিণা রায়ের মাজারও।

গাজী, কালু ও চম্পাবতী নিয়ে অনেক চলচিত্র, পালা গান, মঞ্চ নাটক রচনা করা হয়েছে। মাজারের গা ঘেঁষে আছে ৬টি ছোট বড় বটবৃক্ষ। অনেকেই মানত পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রঙ্গের পলিথিন সুতোর মতো করে সবচেয়ে প্রাচীন বড় বট গাছে বেধে রাখে। প্রেমিকযুগল তাদের মনোকামনা ছোট ছোট কাগজে লিখে গাছের সাথে বেধে দেয়। ১৯৯২ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই তিনটি কবর বাঁধাই করে চারপাশে প্রাচীর ও খাদেমদের থাকার জন্য টিনশেড নির্মাণ করা হয়। গাজী কালু চম্পাবতী মাজারে হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করতে আসে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার যাত্রাবাড়ির সায়েদাবাদ থেকে, সোহাগ, হানিফে যোগে যশোরের পালবাড়ি। এরপর যশোরের পালবাড়ি থেকে গড়াই বা রূপসা বাসে বারোবাজার নেমে অটো বা ভ্যানে গাজী কালু চম্পাবতি মাজার যাওয়া যায়। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি গোল্ডেন লাইনে কালীগঞ্জ যাওয়া যায়। সেখান থেকে যশোরগামী যেকোনো বাসে বারোবাজার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া, গাবতলী থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহণ, জেআর পরিবহণ, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা বা পূর্বাশা ডিলাক্স বাসে পদ্মা সেতু হয়ে ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। এসি/নন এসি এসব বাসে ভাড়া লাগবে ৬৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। ঝিনাইদহ জেলা সদর থেকে বাস কিংবা সিএনজিতে বারোবাজার রোড দিয়ে ২৯ কিলোমিটার দূরে বাদুরগাছায় অবস্থিত গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার যেতে পারবেন।

থাকার স্থান

ঝিনাইদহ শহরে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন ও ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

খাবেন যেখানে

বারোবাজারে সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। আর ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরের কাছে ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল,অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরা, সুইট হোটেল ও আহার সহ কয়েকটি ভালমানের খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে।

Scroll to Top