স্থাস্থ্য ডেস্ক
যকৃৎ বা লিভার মানবদেহে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মানবদেহে মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বরের ওপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃৎ অবস্থিত। এর রং লালচে খয়েরি। একে চলতি বাংলায় কলিজা বলে সচরাচর উল্লেখ করা হয়। ভাজাপোড়া, প্রসেসড ও চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণে লিভারে বেশ চাপ পড়ে, লিভারের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। কিছু খাবার আছে, যা নিয়মিত গ্রহণ করলে লিভারের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। চলুন দেখে নিই সেই খাবারগুলো কী কী।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!১. লেবু এবং জাম্বুরা
লেবুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্লোটাথিয়ন যকৃতের জন্য খুবই উপকারী। এ ছাড়া জাম্বুরা, কমলা, লেবু ইত্যাদি ফল প্রাকৃতিকভাবে লিভার পরিষ্কার করে এবং কারসিনোজেন নামের দূষিত পদার্থগুলো বের করে দিতে সাহায্য করে।
২. বিট এবং গাজর
বিট-গাজরের মধ্যে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েড ও বিটা ক্যারোটিন থাকে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভারকে কার্যকর রাখতে সহযোগিতা করে। এই সবজিগুলো নিয়মিত রান্না করে কিংবা কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। আবার এই সবজিগুলো জুস করে লেবু মিশিয়ে দু-এক দিন পরপর পান করলে যকৃৎ ভালো থাকে।
৩. আপেল এবং পেঁপে
আপেলে পেকটিন এবং পেঁপেতে রয়েছে পেপিন নামের এনজাইম, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ ফলগুলোয় উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা দেহ থেকে দূষিত উপাদান পরিশোধনের মাধ্যমে লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করে। ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য পেঁপে খুবই কার্যকর।
৪. সূর্যমুখীর বীজ
সূর্যমুখীর বীজে থাকা ভিটামিন ই, বি, উচ্চমানের খনিজ লবণ, অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লোটাথিয়ন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিভার পরিশোধন করে দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে লিভারকে সুরক্ষায় সহায়তা করে।
৫. রসুন
রসুন শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং যকৃতে এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণ সেলিনিয়াম ও অ্যালিসিন নামের দুটি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা যকৃতের জন্য সহায়ক।
৬. আখরোট
আখরোটে রয়েছে উচ্চমাত্রার এমাইনো অ্যাসিড আরজিনিন, যা লিভারে উৎপাদিত অ্যামোনিয়া পরিশোধনে সহায়তা করে। আখরোটে গ্লোটাথিয়ন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা লিভার ভালো রাখতে সহায়ক। এই বাদাম চিবিয়ে তরল করে খেলে শোষণ ভালোভাবে হয়।
৭. মাছ
সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩, ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা লিভার পরিশোধনের জন্য সহায়ক। তাই খাদ্যতালিকায় সপ্তাহে অন্তত দুদিন মাছ রাখা ভালো।
৮. হলুদ
লিভার পরিশোধনে সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং দ্রুতগতিতে দূষিত পদার্থ ধ্বংস করে লিভার পরিষ্কার করে হলুদ। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিটাক্যারোটিন যকৃতের জন্য খুবই উপকারী।
৯. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে ক্যাটচিন নামের এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সবুজ চায়ে ফ্ল্যাভোনয়েড নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের কার্য পরিচালনায় সহায়তা করে। যদি এই চা নিয়ম করে পান করা যায় তাহলে লিভারের অন্যান্য রোগ ও ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১০. বাঁধাকপি এবং ব্রকোলি
এই সবজি দুটিতে গ্লোকসিনোলেট নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারে এনজাইম তৈরিতে সহযোগিতা করে। কারসিনোজেন নামের দূষিত জীবাণু দেহ থেকে বের করে দিতে এই এনজাইম বিশেষভাবে কাজ করে।
১১. জলপাইয়ের তেল
জলপাই তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা লিভারের জন্য খুবই উপকারী। এই তেল শরীরের বিভিন্ন ব্যথা উপশম করে এবং লিভার থেকে ক্ষতিকারক জীবাণু বের করে দিতে সহায়তা করে।
১২. আঙুর
আঙুর লিভারের জন্য উপকারী। আঙুর লিভারের প্রদাহ কমাতে, শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বাড়াতে এবং লিভারের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। আঙুর খাওয়া লিভারের সুস্থ কার্যকারিতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। লিভারের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে অবশ্যই পুরো আঙুর খেতে হবে।