ঝিনেদার কাগজ || Jhenedar kagoj || সত্যের আলোয় সুন্দর

১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
কালীগঞ্জ ফেমাস মেরিট কেয়ার একাডেমি

১৯৭১ সালের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান

১৯৭১ সালের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযোদ্ধা ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান

আব্দুস সবুর

আজকের স্বাধীনতা আসেনি এতো সহজেই। পাকিস্থানিদের দমন পীড়ন, উর্দু ভাষার দৌরাত্ব ঠেকাতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা। আজকের ২৪এর গণঅভ্যুত্থানের স্বাধীনতা ১৯৭১ সালের সঙ্গে না মিললেও বৈশিষ্ঠ্য ছিল এক। ৭১ আগে চাকরিতে, দেশের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতা মূল কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ছিল বিস্তর বৈষম্য। মোদ্দাকথা বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশিদের তীব্রক্ষোভ থেকেই বাংলাদেশের সৃষ্টি। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৪৭ সালে যে দেশ গঠিত হয়েছিল, মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে তার মৃত্যু। কেন পাকিস্তান সৃষ্টির দুই দশক না যেতেই বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে তাদের আবেগ, আকাঙ্ক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে পড়েছিল? এক কথায় উত্তর- বৈষম্য, শোষণ । ৭১ সালের স্বাধীনতার মাধ্যমে একটি স্বাধীন মানচিত্র পেলেও এদেশের মানুষ আবার পার্শবর্তী রাষ্ট্রে অলিখিত দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়। ৭১-৭৫এর একদলীয় বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সেই পরিনীতির দিকে আবার ধাবিত হয় স্বাধীন ভূখন্ড। যার চূড়ান্ত পরিণীতি পায় বিগত সরকারের ১৭ বছরের একদলীয় শাসনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েম।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই পূর্ব পাকিস্তানে থাকলেও দেশের সব কিছু গড়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। বিষয়টি ছিল ফলচাষী পূর্বপাকিস্তানের জনগন ফলের মালিক পশ্চিম পাকিস্তান। উৎপাদনের সকল সেক্টর ছিল পূর্বপাকিস্তানে, ব্যবসায়িক কেন্দ্র, সামরিক, রাজনৈতিক ও শাসন ক্ষমতা সব পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের।  ফলে পূর্বপাকিস্তানের জনগন সকল রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রতিরক্ষাসহ সমস্ত ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে বৈষম্যের শিকার হন। পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা যেহেতু দেশের পশ্চিমাংশে ঘাঁটি গাড়েন, শাসন ক্ষমতাও সেখানেই কুক্ষিগত হয়ে পড়ে।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে, সেনাবাহিনীর উঁচু পদে বাঙালিদের নিয়োগ পাওয়া খুব কঠিন ছিল। সেই সঙ্গে, বিনিয়োগে অবহেলার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে হয়ে উঠেছিল পশ্চিমের কল-কারখানার কাঁচামালের যোগানদাতা এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রধান ক্রেতা।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের পর দেশের আপামর জনসাধারণ এ দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎগ্রিব হয়ে থাকে। তার কিছুদিন পর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেওয়ার পর আমিও স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপাইয়া পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে কয়েক বন্ধু মিলে ভারতের বয়রা সীমান্ত পার হয়ে বনগাঁওয়ে পৌঁছায়। সেখানে ১ মাস ইয়ৎ ক্যাম্পে প্রাথমিক ট্রেনিং শেষে আমাদেরকে উচ্চতর ট্রেনিং এর জন্য বিহারের চাকুলিয়া প্রাক্তন সেনা ঘাটিতে প্রেরণ করা হয়। সেনা ক্যাম্পে ১ মাসের ট্রেনিং শেষে ভারতের প্যাট্টাপোল সীমান্তে আমাদেরকে আনা হয়। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতের অন্ধকারে অপারেশন করে আবার ভারতে ফিরে যায়। এই ভাবে দুই এক মাস পর আমাদের কাছে কিছু গোলা বারুদ ও অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে নিজ এলাকায় পাঠানো হয়। আমাদের কাজ ছিল পাক সেনাবাহিনী চলাচলে হঠাৎ আক্রমণ করে পালাইয়া যাওয়া।

এইভাবে ২ থেকে ৩ মাস চলার পর আমরা ভারতে গিয়ে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করি ও গেরিলা যুদ্ধ চালাইয়া যায়। মোবারকগঞ্জ চিনিকলে তখন পাক আর্মীদের ঘাটি ছিল। ঐ ঘাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের যন্ত্র টারবাইন (জেনেরেটর) ডিনামাইটের সাহায্যে উড়াইয়া দিই। কয়েকদিন পর পাক আর্মী সেখান থেকে অন্যত্র চলিয়া যায়।

১৪ই আগষ্ট তৎকালীন পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, তাই আমরা স্বাধীনতা উৎযাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্য কেয়া বাগানের নিকট বোয়ালিয়া ব্রীজ আমি ডিনামাইট দিয়া উড়াইয়া দিই। এইভাবে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে অংশ গ্রহণ করি।

১৬ই ডিসেম্বর সরোওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসর্ম্পনের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। আমরা চেয়েছিলাম পাকিস্তানের কাজ থেকে স্বাধীন হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা পাকিস্তানের কাজ থেকে স্বাধীন হয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের কাছে আবার পরাধীন হয়ে যায়। আমরা তো এটা কখনো চাইনি। আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব শোষণ বিহীন দেশ কামনা করেছে। কিন্তু আমাদের আশা পুরণ হয় নাই।

২৪-এর গণ অভুত্থ্যানে সে আশা আবার দেখতে শুরু করেছি। ক্ষীণ হয়ে যাওয়া আশা আবার আমাদের নতুন প্রজন্ম দেখাতে শুরু করেছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অত্যাচারী ও আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সরকারের পতন হয়েছে। এটি বড় সাফল্য।

আরেকটি সফলতা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে মানুষ সামাজিক বিষণ্নতা কাটিয়ে একটি নতুন সম্ভাবনা, একটি নতুন পরিকল্পনা কিংবা নতুন করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছে। তৈরি হয়েছে বড় সম্ভাবনার জায়গা। এই দুটো সফলতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সরকারের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সেই প্রত্যাশা পূরণে সরকার গত ১০০ দিনে নিয়মিত কাজছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনগুলো এখন কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট আসার পরেই সরকারের সক্ষমতা কিংবা সংস্কারের আসল সম্ভাবনাগুলো আরও স্পষ্ট হবে। আমি মনে করি, কমিশনগুলোর গঠন খুবই ভালো উদ্যোগ। চারটা কমিশন এখনও বাকি। ঘোষণার পরও এগুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপ এখনও দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শ্রমিক, শিক্ষা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। আশা করি, এগুলো খুব শিগগিরই হবে।

জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যা হয়েছে, তা একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যে রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার পতন হলো, তা একধরনের স্বৈরাচারী, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা ছিল। এর ভিত্তিই ছিল বিরোধী সব সংগঠন, সেটা ব্যাংকই হোক, কোম্পানি বা রাজনৈতিক দল হোক—এগুলো ভেঙে ফেলা, দুর্বল করা এবং ভেতর থেকে চূর্ণ করে দেওয়া। আর জনগণের মধ্যে একটা ভয় ছড়িয়ে দেওয়া যে আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে গায়েব হয়ে যাবে। ছাত্রদের আন্দোলন যখন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হলো, এটা উৎখাত হলো। এই সাফল্যের কারণ এর কোনো সংগঠিত ভিত্তি ছিল না। আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছিল গোলাগুলি করে ভয়টাকে পুনরুৎপাদিত করতে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হলো। যে শক্তি সরকারব্যবস্থাকে চূর্ণ করল, সেটি অসংগঠিত রাস্তার শক্তি। এরা কিন্তু আজীবন রাস্তায় থাকতে পারবে না। এখন আমাদের অর্জনগুলো বাস্তবমুখী করতে হলে নিয়মকানুনের মধ্যে আসতে হবে।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা

আরও পড়ুন

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫: জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র

নবম অধ্যায়: উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ব  Thank you for reading this post, don’t forget to subscribe! তৃতীয় পরিচ্ছেদ: সালোকসংশ্লেষণ সুনির্মল চন্দ্র বসু সহকারী

অসত্য, অবিচার ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনই একমাত্র পথ: মাও. আব্দুল হালিম

বনি আমিন, কালীগঞ্জ: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার আয়োজনে প্রাক্তন ছাত্রশিবির সমাবেশ-২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।Thank you for reading this

কালীগঞ্জে পৌর বিএনপির উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

বনি আমিন, কালীগঞ্জ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির উদ্যোগে ৯টি ওয়ার্ডের ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আল মাদরাসাতুল আরাবিয়া হযরত আলী (রা:) মাদ্রাসার ২০০ শিক্ষার্থীর মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেছে সদর উদ্দিন বিশ্বাস ফাউন্ডেশন।

কালীগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

বনি আমিন, কালীগঞ্জ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আল মাদরাসাতুল আরাবিয়া হযরত আলী (রা:) মাদ্রাসার ২০০ শিক্ষার্থীর মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেছে

মহিলা সহ আহত ১৫

শৈলকুপায় (হত্যা ও ধর্ষণ মামলার জেরে) আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ।।

শৈলকুপায় (হত্যা ও ধর্ষণ মামলার জেরে) আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ।। মহিলা সহ আহত ১৫Thank you for reading

সম্পদ বণ্টন সম্পর্কিত আল্লাহর নীতি প্রসঙ্গে

সম্পদ বণ্টন সম্পর্কিত আল্লাহর নীতি প্রসঙ্গে

ডেস্ক রিপোর্ট اللهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ تَشَاءُ وَيَقْدِرُ ط وَفَرِحُوا بِالْحَمُرِةِ الدُّنْبَاءِ وَمَا الْحَيوة الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ الأَمَتَاعُ المرور. আল্লাহ