ঝিনাইদহে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা, আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঝিনেদার কাগজ-এর নির্বাহী সম্পাদক শেখ জিল্লুর রহমান। ঝিনাইদহে চোর সন্দেহে বেলুন বিক্রেতা সুজন হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা কেবল একটি ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের সতর্কবার্তা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনিতে মানুষের মৃত্যু যেন একটি “নিয়মিত ঘটনা” হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠলেই—প্রমাণ, বিচার বা আইনি প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে—জনতার হাতে শাস্তি কার্যকর হয়। একদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতা, অন্যদিকে সামাজিক ক্ষোভ ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতা এ ধরনের ঘটনার পেছনে দায়ী। কিন্তু এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ—অনেক সময় নিরীহ, গরিব বা অসহায় মানুষও এভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আইনের বাইরে গিয়ে শাস্তি দেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত? উত্তর খুবই স্পষ্ট—কোনো অবস্থাতেই নয়। অপরাধী হলেও তার বিচার আদালতে হবে। গণপিটুনি সভ্য সমাজে কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। বরং এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
এখানে রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মানুষ আইনের প্রতি আস্থা ফিরে পায়। অন্যদিকে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সচেতনতা বাড়াতে হবে—গণপিটুনি কোনো সমাধান নয়, বরং এটি নিজেই একটি অপরাধ।
সুজন হোসেনের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, আমাদের সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও এক বড় ক্ষতি। এ ঘটনার দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা যেমন জরুরি, তেমনি এ ধরনের বিচারবহির্ভূত শাস্তি বন্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে আইনের শাসন ধীরে ধীরে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
সাম্প্রতিক ৫ বছরে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা
বছর | নিহতের সংখ্যা (আনুমানিক) |
---|---|
২০২১ | ৫৪ |
২০২২ | ৬৮ |
২০২৩ | ৭৫ |
২০২৪ | ৮১ |
২০২৫ | ৯২ |