বনি আমিন, কালীগঞ্জ
কালীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ ও বিক্ষোভ: পিতার হত্যার বিচার দাবিতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শহীদের কন্যা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিএনপির বিশাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
শুক্রবার বিকেলে শহরের সরকারি ভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিগত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রয়াত দুই নেতা—ইউনুছ আলী ও মোহাব্বত আলী বিশ্বাসের হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে শহর।
সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্যে আগুন ছড়ান বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ।
তিনি বলেন “আমরা চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী দেখতে চাই না। দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্ম করছে, তাদের গ্রেপ্তার করুন। আমরা মানবিক পুলিশ দেখতে চাই, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, গরিবের পক্ষে কথা বলবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না।
যারা বিএনপির নাম নিয়ে চাঁদাবাজি করছে, তাদের দল থেকে বহিষ্কার ও আইনের আওতায় আনতে হবে। শহীদ জিয়ার গড়া দল, তারেক রহমানের নির্দেশে জনগণের পাশে থাকাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।” সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আতিয়ার রহমান।
এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম রবি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, নজরুল ইসলাম, যুবদল নেতা মাহাবুবুর রহমান মিলন, প্রভাষক এম এ মজিদ, সাবেক ছাত্রনেতা বাবলুর রহমান, আশরাফুজ্জামান লাল, মাজহারুল আনোয়ার প্রিন্সসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত আসে তখন, যখন প্রয়াত বিএনপি নেতা ইউনুছ আলীর কন্যা ফজিলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন “আমার বাবাকে যারা খুন করেছে, তারা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।
আমি তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন এদের কেউ মনোনয়ন না পায়। আমরা খুনি ও চাঁদাবাজদের বিচার চাই।” তার এ হৃদয়স্পর্শী বক্তব্যে উপস্থিত অনেকেই অশ্রুসিক্ত হন।
বক্তারা আরও বলেন, ১৭ বছরের দুঃশাসন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে লড়াই করেছে। বর্তমান সময়ে দলীয় ঐক্য রক্ষা করে, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে, শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়।
এদিন কালীগঞ্জ শহর জুড়ে মিছিল, স্লোগান ও শোক-প্রতিবাদের বজ্রকণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় “হত্যার বিচার চাই! শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না!” সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার সমাবেশস্থলে এসে শেষ হয়। এদিন কালীগঞ্জে শুধুই একটি রাজনৈতিক সমাবেশ হয়নি, হয়েছে বেদনার আবেগঘন প্রতিবাদ যেখানে একজন কন্যা তার শহীদ পিতার বিচারের আকুতি নিয়ে জাতির বিবেককে নাড়া দিলেন।