ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
১৪৪ ধারা অমান্য করে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে ভিডিও ধারণ ও শোডাউন, অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে! এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘বাইক সেবার’ মাধ্যমে কয়েক জনকে কেন্দ্রে পৌছে দেওয়ার মতো মানবিক কাজ যেমন ছিল ছাত্রদল নেতাদের, ঠিক তেমনি কেন্দ্রের ভিতরেই ‘শোডাউন’ মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ মতো অনিয়ম করে ১৪৪ ধারা অমান্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে দলটির দুই নেতার বিরুদ্ধে ! যা ছাত্র সংগঠনটির মানবিক কাজ ধুলিসাৎ হওয়ার পথে।
বৃহস্পতিবার থেকে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমাননা পরীক্ষা ২০২৫ এর কেন্দ্র ছিল সরকারি মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ। এসময় ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির পৃথক মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সময় ছাত্রদলের দুই নেতার অতিরঞ্জিত কাজ যা সংগঠনটির মানবিক কাজকে ছাপিয়ে বিতর্কিত পর্যায়ে নিয়ে গেছে এবং পরীক্ষকদের মতে, এসএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের নিয়মবিধির সুস্পষ্ট ব্যত্যয়, অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা বা ব্যবস্থা গ্রহণ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মাহ্তাব উদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ডি.এফ. ইফতি জাহান এবং হারুনর রশীদ রাজা নিয়ম অমান্য করে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও ধারণ করেন এবং ‘শোডাউন’ করেন।
এছাড়াও বাইক সেবার নামে নিয়ম অমান্য করে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে মোটরসাইকেলে করেই প্রবেশ করেন এই ছাত্রদল নেতা। এই দুই ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা জারিকরা কেন্দ্রের ভেতরে চেয়ার পেতে জটলা পাকাতেও দেখা যায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদেরকে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা অত্র পরিক্ষা কেন্দ্রের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অবিভাবকরা।

বিদ্যমান যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা সময় নির্দিষ্ঠ কিছু নিয়ম জারি করেন সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষাবোর্ড। ঠিক একই ভাবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৪ নির্দেশনা ছিল। সেগুলি হলো-
- এসএসসি পরীক্ষার হলে কোনো বহিরাগত ব্যক্তির প্রবেশ করার সুযোগ নেই। পরীক্ষার হলগুলোতে শুধু পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারেন। পরীক্ষার দিনগুলোতে, কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন নিয়েও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারে না।
- পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার জন্য পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই প্রবেশপত্র সাথে রাখতে হবে এবং পরীক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশি করা হতে পারে, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু বা ডিভাইস কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে।
- যদি কোনো ব্যক্তি নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে জাহির করে বা পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে, তবে তা পাবলিক পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে প্রবেশ করে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাই, পরীক্ষার হলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এবং নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা এড়াতে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন হচ্ছে হলের আসন বিন্যাস অন্যকেউ খুজে দিতে পারে কি ? ধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আইন হচ্ছে –
পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর নিজের সিট অন্য কেউ খুঁজে দিতে পারে না। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার আগে নিজের আসন খুঁজে বের করতে হবে। সাধারণত, পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং শিক্ষার্থীদের সেই সময়ের মধ্যে তাদের আসনে বসতে হয়।
পরীক্ষার হলে সিট খুঁজে বের করার জন্য যা যা করা যেতে পারে:
-
প্রবেশপত্র ভালোভাবে দেখুন:প্রবেশপত্রে আপনার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করা থাকে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আপনার সিট নম্বর এবং কক্ষ নম্বর সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
-
হল পরিদর্শকদের সহায়তা নিন:পরীক্ষার হলে
-
সাধারণত হল পরিদর্শকরা থাকেন। প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নিয়ে আপনার সিট খুঁজে বের করতে পারেন।
-
অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সহায়তা নিন:যদি আপনার আশেপাশে কেউ আপনার সিট খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে, তাহলে তাদের সহায়তা নিতে পারেন।
-
নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন:আপনার পরিচিত কেউ যদি একই কক্ষে পরীক্ষা দেয়, তবে আপনারা একসাথে সিট খুঁজে বের করতে পারেন।
এদিকে, স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, কেন্দ্রের আশেপাশে ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। নিয়ম ভঙ্গ করলেও তাঁদেরকে কেউ বাধা দেয়নি, এমনকি কেন্দ্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।
এ বিষয়ে কেন্দ্র পরিচালক বরাবর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
পরীক্ষা দিতে আসা স্থানীয় সচেতন অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, “একটি ছাত্রসংগঠনের নেতার যদি ক্ষমতা এমন হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?”
প্রশ্ন উঠেছে—১৪৪ ধারা কি শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ? নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে কি?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ রক্ষায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।