বারোবাজার: ইতিহাসের গন্ধ মাখা প্রাচীন জনপদ। বারোবাজার বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক এলাকা। এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ হিসেবে পরিচিত, যার ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব, ধর্মীয় সহাবস্থান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বারোবাজারের রয়েছে এক বিশিষ্ট পরিচয়।
ইতিহাস ও নামকরণ
বারোবাজার নামটি এসেছে বারোটি বাজার বা বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে, যা এক সময় এখানে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হয়। অনেকের মতে, এখানে বারোটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত বলেও নামকরণ হয়েছে বারোবাজার। তবে এটি প্রমাণসিদ্ধ নয়, তবে নামটির পেছনে ঐতিহাসিকতা রয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
বারোবাজার এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রায় ৩০টিরও বেশি প্রাচীন মসজিদ, মন্দির ও বসতির নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থান খনন করে মুঘল ও সুলতানী আমলের স্থাপত্যের সন্ধান পেয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে:
-
গোরস্থান মসজিদ
-
ছয়গম্বুজ মসজিদ
-
মাটির মসজিদ
-
নৃপেন মন্দির
-
আঠারো শতকের কূপ ও কবরস্থান
এই স্থানগুলো প্রমাণ করে যে বারোবাজার এক সময় একটি সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যেখানে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্থান ছিল।
ধর্মীয় সহাবস্থান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
বারোবাজারে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা পাশাপাশি অবস্থান করছে, যা এ অঞ্চলে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণের প্রতীক।
আধুনিক উদ্যোগ
বর্তমানে সরকার ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বারোবাজারকে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে। এলাকাটি সংরক্ষণ ও পর্যটকদের উপযোগী করে তুলতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
বারোবাজার শুধু একটি স্থান নয়, এটি ইতিহাস, ধর্মীয় সহাবস্থান এবং প্রাচীন সভ্যতার জীবন্ত সাক্ষী। যারা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও সাংস্কৃতিক শিকড় খুঁজতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বারোবাজার একটি অপরিহার্য গন্তব্য।