ডেস্ক রিপোর্ট
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধিতার কারণে অধ্যাপক গোলাম আযম শহীদ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার মেঝ ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
বৃহস্পতিবার অধ্যাপক গোলাম আযমের একাদশ শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।
আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম বিশ্ব মানবতা ও ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ভারত বিরোধিতার কারণে তিনি শহীদ হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একজন অনুসরণীয় মানুষ ছিলেন। আল্লাহকে ও তার নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার জন্য তাকে আপনারা ভালোবাসবেন ।
তিনি বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে নানা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তার চরিত্র হনন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। ৫৪ বছর পর দেশ জালিম মুক্ত হয়েছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে কী কারণে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী ছিলেন। আমাদের তিন/সাড়ে তিন দিকে ভারত। তারা বাংলাদেশকে শত্রু মনে করে। ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিতে জনগণকে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ভাষা আন্দোলনে সব থেকে বেশি অবদান রাখা নেতা বলে আখ্যায়িত করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি বলেন, আমার বাবা বলে বলছি না, তার অবদানের কারণে বলছি। শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ মানুষ একদিন তাকে নিয়ে পড়াশোনাও করবে।
অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের মুর্শিদ ঘোষণা করে তার শাহাদাত বার্ষিকী পালনের ঘোষণা দিয়েছিল নতুন মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর মগবাজারের কাজী অফিস লেন মসজিদে দোয়া মাহফিল আয়োজন করে দলটি। এ মসজিদেই নামাজ পড়তেন অধ্যাপক গোলাম আযম। তাই শাহাদাত বার্ষিকীতে এখানেই হাজির হন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। তাদেরকে নিয়ে দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুবের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, গালীব ইহসান, সদস্য ওয়াসিম আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ, সাইদুল ইসলাম ও সুমন আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও জিহাদী ইহসান প্রমুখ।
দোয়া মাহফিলের পরে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক গোলাম আযমের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ শাহবাগী মব ঘটিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েও শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ইতিহাস থেকে মুছতে পারেনি। বরং জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মুক্ত বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ বিরোধী জনগণ তার মুসলিম জাতীয়তাবাদী লড়াইকে নতুন করে গ্রহণ করছে।
সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী শহীদদের নিয়মিত স্মরণ করতে হবে। তারা জনগণের মন থেকে হারিয়ে গেলে লড়াইও হারিয়ে যাবে। এ কারণে আমার অধ্যাপক গোলাম আযমসহ আধিপত্যবাদ বিরোধী সকল শহীদদের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করে যাব।
সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান বলেন, শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযম ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী সব থেকে বড় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শাহবাগী মব আন্দোলনের দাবির মুখে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ রাজনীতিক, তাত্ত্বিক ও লেখক অধ্যাপক গোলাম আযমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচণ্ড বিতর্ক তৈরি হয়। এরমধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ইন্তেকাল করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। তখন ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমীর উদ্যোগে দেশের সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজার মধ্য দিয়ে এ চিন্তাবিদ চির বিদায় নেন।