দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেলো জামায়াত জাতীয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ পুনর্বহাল করেছে। আজ মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ এ আদেশ জারি করেন। প্রজ্ঞাপনটি নির্বাচন কমিশনের স্মারক নম্বর ১৭.০০.০০০০.০২৫.৫০.০৫৮.০৮-১৫৪ অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়।
২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর (নিবন্ধন নম্বর-০১৪) Representation of the People Order, 1972–এর ৯০বি অনুচ্ছেদের আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন প্রদান করা হয়। পরে, ২০০৯ সালে একটি রিট পিটিশন (নং: ৬৩০/২০০৯) দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। তবে, উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ Civil Appeal No. 139 of 2013 with Civil Petition for Leave to Appeal No. 3112 of 2013 মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাতিল করে। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে নির্বাচন কমিশন পূর্বের বাতিলকৃত নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন (স্মারক: ১৭.০০.০০০০.০২৫.৫০.০৫৮.০৮-৬৮৯, তারিখ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮) আজকের আদেশ দ্বারা বাতিল ঘোষণা করে এবং জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক পুনর্বহাল করে। নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এটিকে ‘ন্যায়বিচারের বিজয়’ এবং ‘আইনের শাসনের প্রতিফলন’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সুসংহত করবে এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “জনগণের ভালোবাসা, আইনি সংগ্রাম ও মহান আল্লাহর কৃপায় আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার পুনরুদ্ধার করেছি। এখন থেকে আমরা সক্রিয়ভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেব।”
বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন পর দলটি নির্বাচনী মাঠে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। একদিকে দলটির সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ফিরে এসেছে, অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর আবারও নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফিরে এলো তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’সহ। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নয়—বরং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে থাকবে।