ইরান বিভিন্ন ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। ১৯৭৯ সালের ইরানি জিম্মি সংকট, ১৯৮০ সালের অপারেশন ঈগল ক্ল, এবং ইসরায়েলের পারমাণবিক নথি তেহরানে চলে যাওয়া - এই ঘটনাগুলো ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার উদাহরণ। এই সব ঘটনায় ইরান বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে. ইরানের গোয়েন্দা ব্যর্থতার উদাহরণ: **ইরান জিম্মি সংকট (Iran Hostage Crisis): ১৯৭৯ সালে তেহরানে ৬৬ জন মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করে রাখা হয় এবং তাদের মধ্যে ৫২ জনকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জিম্মি করে রাখা হয়। এই সংকট ইরানি বিপ্লবের পর দেখা দেয়। এই সংকট ছিল একটি আন্তর্জাতিক সংকট, যেখানে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা প্রমাণ করে. **অপারেশন ঈগল ক্ল (Operation Eagle Claw): ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য একটি অভিযান চালায়, যা অপারেশন ঈগল ক্ল নামে পরিচিত। এই অপারেশনে দুটি হেলিকপ্টার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এগিয়ে যেতে পারেনি এবং একটি ধূলিঝড়ের কারণে দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। এই কারণে পুরো দলটিকে দেরিতে অবতরণ করতে হয় এবং অভিযানটি ব্যর্থ হয়. **ইসরায়েলের পারমাণবিক নথি তেহরানে চলে যাওয়া: সম্প্রতি ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনার নথি তেহরানে চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনা ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার আরও একটি উদাহরণ, যেখানে তাদের দুর্বলতার কারণে গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে. **ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি: কিছু তথ্য থেকে জানা গেছে যে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তথ্য ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়. এই সব ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারেনি এবং তাদের দুর্বলতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়েছে। এই দুর্বলতার কারণে ইরান বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে.

ইসরায়েলে পাল্টা হামলা এখনই নয়, পরবর্তী টার্গেট সর্বোচ্চ নেতা খোমেনি?

শেখ জিল্লুর রহমান

ইসরায়েলে পাল্টা হামলা এখনই নয়, পরবর্তী টার্গেট সর্বোচ্চ নেতা খোমেনি। গোয়েন্দা ব্যর্থতায় ইরানের শোচনীয় পরাজয়। এই হামলা সংঘটিত না হলে ইসরায়েল অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারতো। ইরানের চিফ অফ আর্মি স্টাফ বাঘেরিসহ শীর্ষ জেনারেলদের হারিয়ে দেশটির কোমর প্রায় ভেঙেগেছে। ১৩ জুন দিনটি ছিল ইরানের জন্য ভয়ংকর। আমার ধারণা ইসরায়েলির পরবর্তী টার্গেট দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। ইরানের গোয়েন্দারা আবার ব্যর্থ হলে তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি গেঁথে যেতে পারে। এখন,  প্রশ্ন হলো ইরানের পাল্টা হামলা কখন হওয়া উচিত?  আমার মতে কমপক্ষে ১ সপ্তাহ অপেক্ষা করা উচিত।

পাল্টা হামলা পেছানোর অনেকগুলি কার কারণ রয়েছে-

১. ইসরায়েল স্টেট অব ইমার্জেন্সি অর্থাৎ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। নেতানিয়াহুসহ দেশটির প্রধান নেতাদের সকলেই পৃথক  নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। স্কুল কলেজ সব বন্ধ। এই সময়ে আক্রমণ করে খুব ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনবে না বরং আন্ডারগ্রাউন্ডে এক সপ্তাহ রাখতে পারলে মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকবে। যা ইসরাইলি নেতৃত্বকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বা সঠিক ভাবে ভাবতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

২. ইরানের কোন ভাবেই উচিত হবে না মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকরা মার্কিন বিমান ঘাটিতে আক্রমণ করা। এটি ভবিষ্যতে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিউক্লিয়ার এটাকের পথ সৃষ্টি করবে । একাধিক ভূমি বা দেশকে লক্ষ্যবস্তু না করে শুধুমাত্র ইজরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

৩. সবথেকে বড় প্রশ্ন হল, ট্রাম্প খুব স্পষ্ট ভাবেই সতর্কবার্তা দিয়েছে ইরানে আক্রমনের ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইভ্যাকুয়েশন মুভ ইরানের কাছে ইসরায়েল এটাককে অগ্রিম বার্তা দিয়েছে। প্রশ্ন হল, এরপরো কেন ইরানের এডি সিস্টেম ব্যর্থ হল? এমনকি এত দীর্ঘপথ অতিক্রম করে চালানো হামলায় ইরানের রাডার সিস্টেমের পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।

৪. এই এটাক আমার ধারণা কম্বিনেশন অব একচুয়াল এটাক এবং ইনসাইড জব বা স্যাবোটাজ। ইরানি উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তাদের গতিবিধি ইসরায়েলের কাছে সঠিক সময় পৌছানোর  কারণে বড় রকমের সফলতা পেয়েছে দেশটি।

৫. যৌক্তিক প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ সমর্থনে এই হামলা হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলছেন, এটা ইসরায়েলের একক হামলা। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে,  যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছাড়া ইজরায়েলের পক্ষে নির্ভুল লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে একটু নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থান করতে চাইছে।

৬. সাইবার হামলার উদ্দেশ্য হতে পারে, ইরানের “ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ (EDI) সিস্টেম” ও রাডার ইউনিট অকেজো করে দেওয়া। সম্ভবত সেটিই হয়েছে ৷ ইরানের পাল্টা হামলায় দৃশ্যমান ক্ষতি না করতে পারলে ইরানের মর্যাদা বা হুমকির সংস্কৃতি আর থাকবেনা।

৭.ইরানের ‍উচিত আত্মগৌরব থেকে বেরিয়ে চিন অথবা রাশিয়া থেকে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা বা দুরপাল্লার এয়ার টু এয়ার মিসাইল নিজের বহরে সংযুক্ত করা। বিমান বাহিনীকে আরো উন্নত করা। আত্মঅহংকার কখনো ভালোকিছু বয়ে আনে না।

৮. ইসরায়েলের তথ্য ইরানের হাতে হস্তগত হওয়ার কারণে, ইসরায়েলের কাছে এখন ইরান হামলা পেছানোটা ছিল দেশটির জন্য জলন্ত অঙ্গারে ঝাপ দেওয়ার সামিল ৷ হাতে আসা ইসরায়েল সম্পর্কিত নথিগুলি নিয়ে আরো এনালাইসিস করার সময় ইরান পাবে। হুথি বা ইরাকের সাথে সেগুলা শেয়ার করতে পারবে ইরান। এটা ইসরায়েলকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে গিয়েছিল। ইরানে হামলা করতেই হতো ইসরায়েলকে। এখন পালটা হামলা ইরানের জন্য বেশ কঠিন। এই হামলায় নিশ্চিত হওয়া যাবে ইরানের হাতে পাওয়া গোপন নথি আদেও ইরানকে কোন লেভারেজ দিতে পারবে কিনা। মাথা গরম করে ভুল টার্গেটে হামলা করলে এটা ইজরায়েল ও ইউএস এর কাছে ইরানের অসারতা প্রকাশ করবে যা ইরানের ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য হুমকি। বিশ্ব এখন কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। হরমুজ প্রণালীতে এখন জাহাজ চলাচল সীমিত হবে। ইতোমধ্যে তেলের দাম ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

৯. ইরানের পাল্টা হামলার পর যদি ইরানে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালানো হয়, তবে নিশ্চিত ইউক্রেনের কপাল পুড়বে। রাশিয়াও ইউক্রেনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র (ট্যাকটিকাল নিউক) ব্যবহার করবে বলে আমার ধারণা। সব মিলিয়ে বৃহৎ আঞ্চলিক যুদ্ধ অথবা বৈশ্বিক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচেছ বিশ্ব।

১০. ইরানের গোয়েন্দা ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা। ইরানকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। ১৯৭৯ সালের ইরানি জিম্মি সংকট, ১৯৮০ সালের অপারেশন ঈগল ক্ল, এবং ইসরায়েলের পারমাণবিক নথি তেহরানে চলে যাওয়া – এই ঘটনাগুলো ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার উদাহরণ। এই সব ঘটনায় ইরান বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে.
ইরানের গোয়েন্দা ব্যর্থতার উদাহরণ:
ইরান জিম্মি সংকট (Iran Hostage Crisis):

১৯৭৯ সালে তেহরানে ৬৬ জন মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করে রাখা হয় এবং তাদের মধ্যে ৫২ জনকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জিম্মি করে রাখা হয়। এই সংকট ইরানি বিপ্লবের পর দেখা দেয়। এই সংকট ছিল একটি আন্তর্জাতিক সংকট, যেখানে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা প্রমাণ করে.

অপারেশন ঈগল ক্ল (Operation Eagle Claw):
১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য একটি অভিযান চালায়, যা অপারেশন ঈগল ক্ল নামে পরিচিত। এই অপারেশনে দুটি হেলিকপ্টার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এগিয়ে যেতে পারেনি এবং একটি ধূলিঝড়ের কারণে দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। এই কারণে পুরো দলটিকে দেরিতে অবতরণ করতে হয় এবং অভিযানটি ব্যর্থ হয়.
ইসরায়েলের পারমাণবিক নথি তেহরানে চলে যাওয়া:
সম্প্রতি ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনার নথি তেহরানে চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনা ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার আরও একটি উদাহরণ, যেখানে তাদের দুর্বলতার কারণে গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে.
ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি:
কিছু তথ্য থেকে জানা গেছে যে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তথ্য ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়.
এই সব ঘটনা প্রমাণ করে যে, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারেনি এবং তাদের দুর্বলতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়েছে। এই দুর্বলতার কারণে ইরান বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে.
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
Scroll to Top