জোড় বাংলা মসজিদ

জোড় বাংলা মসজিদ বা জোড়া ঢিবি মসজিদের ইতিহাস

জোড় বাংলা মসজিদ, যা স্থানীয়ভাবে “জোড়া ঢিবি মসজিদ” নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। এই মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।

ইতিহাস ও নির্মাণ

ধারণা করা হয়, হিজরি ৮০০ সালে (প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে) আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের পুত্র শাহ সুলতান মাহমুদ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেন, মসজিদটির স্থানে এক সময়ে দুটি কুঁড়েঘর ছিল, আবার কেউ বলেন, দুটি পুকুর বা “জোড়া দিঘি” ছিল, যার কারণে এটি “জোড় বাংলা” নামে পরিচিতি পায়

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য

  • আকৃতি ও নির্মাণ: মসজিদটি একটি বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট স্থাপনা, যা প্রায় ১১ ফুট উঁচু ভিত্তির উপর ছোট ও পাতলা ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত।

  • প্রবেশপথ ও বুরুজ: পূর্ব দিকে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে এবং চার কোণায় আটকোণ বিশিষ্ট কারুকার্যমণ্ডিত বুরুজ রয়েছে।

  • মেহরাব ও অলংকরণ: পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার পোড়ামাটির নকশাকৃত মেহরাব রয়েছে, যার কেন্দ্রীয় মেহরাবে ফুল ও পাতার কারুকাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য

সংলগ্ন এলাকা ও আবিষ্কার

মসজিদের উত্তর দিকে “অন্ধপুকুর” নামে একটি দিঘি রয়েছে, যা সুলতান মাহমুদ শাহের শাসনামলে মুসল্লিদের ওজু ও পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে খনন করা হয়েছিল। মসজিদের আশেপাশে কয়েকটি কবরও রয়েছে। নির্মাণের পর মসজিদটি জঙ্গলে ঢেকে যায় এবং ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননের মাধ্যমে এটি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়

ভ্রমণ নির্দেশিকা

  • কিভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহন, জেআর পরিবহন, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা ও পূর্বাশা ডিলাক্স বাসে ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। ঝিনাইদহ থেকে বাস বা সিএনজিতে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক হয়ে বারোবাজারে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশাযোগে মসজিদে যাওয়া যায়

  • থাকার ব্যবস্থা: ঝিনাইদহ শহরে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, ক্ষণিকা রেস্ট হাউস ও হোটেল ড্রিম ইন-এর মতো আবাসিক হোটেল রয়েছে।

  • খাবারের স্থান: বারোবাজারে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরের কাছে ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল, অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরাঁ, সুইট হোটেল ও আহার-এর মতো ভালো মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে

জোড় বাংলা মসজিদ তার স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের জন্য ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

সম্পাদনা: এসজেআর

Scroll to Top