ডেস্ক রিপোর্ট
পাহাড় পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম। প্রকৃতিপ্রেমী মাত্রই পাহাড় পছন্দ করে। অ্যাডভেঞ্চারের টানে ছুটে চলে পাহাড়ে। পাহাড়ের চূড়া জয় করতে ভালোবাসে মানুষ। পৃথিবীতে এমন কিছু পাহাড় আছে যেসব পাহাড় গতানুগতিক পাহাড় থেকে আলাদা। একেক পাহাড় একেক প্রাকৃতিক বিস্ময় এবং সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। আজ তেমনি কয়েকটি পাহাড় সম্পর্কে জানাব।
চকলেট পাহাড়: নাম শুনে মনে হতে পারে এই পাহাড়ে হয়তো চকলেট জন্মায় কিংবা চকলেট দিয়ে তৈরি কোনো কৃত্রিম পাহাড়। তবে এটা অন্যান্য পাহাড়ের মতোই মাটিতে গড়া পাহাড়। কিন্তু এই পাহাড়ের বিশেষত্ব হলো একে চকলেটের মতো দেখায়। যার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে চকলেট পাহাড়। দ্বীপদেশ ফিলিপিন্সে দেখা মিলবে এই পাহাড়ের। অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশ ফিলিপিন্স প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার। দেশটির বোহোল প্রদেশে আছে চকলেট পাহাড়। এটি একক পাহাড় নয়, চকলেট পাহাড় অনেকগুলো পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। চকলেট পাহাড় ৫০ বর্গকিলোমিটার (২০ বর্গমাইল) এরও বেশি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। সেখানে বারো শয়েরও বেশি পাহাড় রয়েছে। এগুলি সাধারণত সবুজ ঘাসে ঢাকা থাকে। তবে শুষ্ক মৌসুমে চকলেট-বাদামি হয়ে যায়, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে চকলেট পাহাড়। এই পাহাড়গুলোর উচ্চতা ১০০ ফুট থেকে ৩০০ ফুটের মতো। তাই বেশি উঁচুও নয়। তবে বিশাল অংশজুড়ে বিস্তৃত পাহাড়গুলো দেখতে বেশ সুন্দর। পর্যটকেরা এখানে প্রতিবছর ভিড় জমান।
ঢেউ খেলানো পাহাড়: পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলরেখায় আছে এক অদ্ভুত পাহাড়। যা বিশ্বব্যাপী সার্ফারদের মুগ্ধ করে। কেননা এটি দেখতে ঢেউয়ের মতো। তাই এর নাম ওয়েভ রক। কীভাবে এর নামকরণ হয়েছে তা উপলব্ধি করার জন্য কয়েক মিটার উঁচু বহুরঙের গ্রানাইট পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। যেখানে প্রাচীন পাথর আর শিলা রয়েছে। ওয়েভ রক হলো একটি প্রাকৃতিক শিলা গঠন যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উঁচু আকৃতির। এই ঢেউ তরঙ্গ প্রায় ১৫ মিটার (৫০ ফুট) উঁচু এবং প্রায় ১১০ মিটার (৩৬০ ফুট) লম্বা। এটি অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে মাত্র চার ঘন্টার গাড়ি দূরত্বে হুইটবেল্ট শহরে অবস্থিত।
বাদাব-ই সুরত: ইরানে বাদাব-ই সুরত নামে এক অন্যরকম পাহাড় আছে। যেটা দেখলে মনে হবে কেউ পাহাড়টিতে খাঁজ কেটে সিঁড়ির মতো ধাপ বানিয়ে দিয়েছে। মূলত হাজার হাজার বছর ধরে, দুটি খনিজ ঝর্ণার প্রবাহমান পানি শীতল হয়ে পাহাড়ের ধারে কার্বনেট খনিজ জমা হয়ে ধাপযুক্ত ট্র্যাভার্টাইন সোপান গঠন তৈরি হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে খনিজ ঝর্ণাগুলো শীতকালেও জমে না। বাদাব হলো ফার্সি শব্দ ‘বাদ’ এর অর্থ ‘গ্যাস’ এবং ‘আব’ যার অর্থ ‘পানি’, পুরো শব্দটির অর্থ ‘গ্যাসযুক্ত পানি’। যা ঝর্ণার পানিকে বুঝায়। সুরত হলো স্থানটির কাছাকাছি অবস্থিত ওরোস্ট গ্রামের একটি পুরানো নাম এবং একটি ফারসি শব্দ যার অর্থ ‘তীব্রতা’। ইরানের এই পাহাড় প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলোর মধ্যে অন্যতম।
ঝাংজিয়াজি পিলার: চীনের হুনান প্রদেশে অবস্থিত ঝাংজিয়াজি জাতীয় বন উদ্যানে রয়েছে সুউচ্চ বেলেপাথরের স্তম্ভ বা পাহাড়। এই উদ্যানটি তার অনন্য শিলা গঠনের জন্য বিখ্যাত। এখানে কিছু লম্বা লম্বা পাহাড় দেখা যায় যেগুলোর উচ্চতা ২০০ মিটার (৬৫৬ ফুট) এরও বেশি।
এই লম্বা লম্বা পাহাড়গুলো দেখলে মনে হবে যেন বনের মাঝে পিলার বা স্তম্ভ বসানো হয়েছে। এখানকার সবচেয়ে উঁচু স্তম্ভটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,০৮০ মিটার (৩,৫৪৩ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। এই প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলি ঘন বন, কুয়াশা এবং ঝর্ণাধারা দ্বারা বেষ্টিত। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় থাকা এই বন হয়তো আমরা অনেকেই বিভিন্ন ছবি, ভিডিওতে দেখেছি।