টিউশন ফি ছাড়া অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা, স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

টিউশন ফি ছাড়া অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা, আছে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

পড়াশোনা ডেস্ক

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে টিউশন ফি ছাড়া অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা, ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অপূর্ব দেশ অস্ট্রিয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য নয়, বরং দেশটি উচ্চমানের শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও বেশ পরিচিত। ইউরোপের যেসব দেশে অল্প খরচে পড়াশোনা করা যায়, তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। অস্ট্রিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিতে হয় না। যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই এই দেশটি উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণের এক আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আজ জানাব অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আদ্যোপান্ত।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের যোগ্যতা

অস্ট্রিয়ায় ব্যাচেলর কোর্স সাধারণত জার্মান/ডয়েচ ভাষায় করতে হয়। ব্যাচেলর কোর্সের জন্য জার্মান/ডয়েচ B2 লেভেল সম্পন্ন করতে হবে। ল্যাংগুয়েজ কোর্স আপনি বাংলাদেশেও করতে পারবেন অথবা অস্ট্রিয়াতে গিয়েও করতে পারবেন।
অস্ট্রিয়ার প্রধান পড়াশোনার ভাষা জার্মান হলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি ভাষায় কোর্সও রয়েছে। যদিও ভর্তির জন্য আইইএলটিএস অত্যাবশ্যকীয় নয়, তবে ভিসা আবেদনের পূর্বে ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য অবশ্যই আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ থাকতে হবে। মাস্টার্স করার জন্য থাকতে হবে ৬/৬.৫।
আপনি যদি ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যেতে চান, তা হলে এইচএসসির সঙ্গে বাংলাদেশে এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে চান, তা হলে ব্যাচেলর ডিগ্রি আর পিএইচডি প্রোগ্রামে যেতে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশটির ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন

সব একাডেমিক কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হবে যথাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রিয়ার এম্বেসি দ্বারা। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র সত্যায়িত করার পর আপনি যখন এগুলো এম্বেসিতে জমা করবেন, এম্বেসি কনস্যুলেট সেগুলোকে ভিএফএস ঢাকা অফিসে পাঠাবে এবং এর ফি বাবদ ৪৩,১২০ টাকা থেকে ৪৭,০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এর পর সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার পর ভিএফএস সেটা পুনরায় এম্বেসিতে পাঠাবে এবং তার পর এম্বেসি কনস্যুলেট তা সত্যায়িত করবে।

ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া

অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাধারণত দুই সেমিস্টার থাকে। প্রথমটি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর পরেরটি মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। অস্ট্রিয়ায় ভর্তি, অফার লেটার, ডকুমেন্ট অ্যাটাসটেশ, ভিসা- পুরো প্রসেস করতে প্রায় ৬ থেকে ১২ মাস প্রয়োজন পড়ে। তাই আগেভাগেই কাজ শুরু করতে হবে।

আরো পড়ুন: মনুষের দায়িত্ব ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা
শৈলকুপায় মাটি ছাড়াই সবজির চারা উৎপাদন
ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
  • পূরণকৃত আবেদন ফরম
    সব একাডেমিক সনদ ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি
    ইংরেজি বা জার্মান ভাষার সনদ
    জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি
    মোটিভেশন লেটার/ সিভি/ রেফারেন্স লেটার
    কাজের অভিজ্ঞতা/ রিসার্চ পেপার (যদি প্রয়োজন হয়)
আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ

আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণের জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৮৯৭.১৬ ইউরো (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের নিচে হয়) অথবা ১০৬৭৮.০৮ (শিক্ষার্থী যদি ২৪ বছরের বেশি হয়) ইউরো থাকতে হবে। তবে মনে রাখবেন, টাকার উৎস, ট্যাক্সের ডকুমেন্টস সবকিছু ভিসার জন্য জমা দিতে হবে। তবে ভিসা পাওয়ার পর আপনি চাইলে এই টাকা তুলে ফেলতে পারবেন।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে অস্ট্রিয়ার এম্বেসি না থাকায় ভিসার জন্য আপনাকে ভারতে যেতে হবে। এ জন্য প্রথমেই আপনাকে সে দেশে অবস্থিত এম্বেসিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা:

পূরণকৃত আবেদন ফরম ও সঙ্গে সংযুক্ত পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫ মিমি x ৪৫ মিমি)

  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার
    পাসপোর্ট
    বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার
    সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত/ মোটিভিশন লেটার
    সব একাডেমিক সনদ ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি
    আইইএলটিএস বা জার্মান ভাষাগত দক্ষতার সনদ
    টিউশন ফি পেমেন্টের কপি
    ট্রাভেল হেলথ ইনস্যুরেন্স
    পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কনস্যুলেট অফিস কর্তৃক সত্যায়িত)
    অ্যাকোমোডেশন কনফার্মেশন লেটার
    সত্যায়িত জন্মসনদের কপি
    চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ (মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য)
    স্পন্সরের অ্যাফিডেভিট পেপার
    স্পন্সরের অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাপ্লিকেন্টের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রমাণপত্র
    অ্যাপ্লিক্যান্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
জীবনযাত্রার ব্যয়ের ধারণা ও খণ্ডকালীন চাকরি

অস্ট্রিয়ায় থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতি মাসে আপনার ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো খরচ হবে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো আপনি এই দেশেও সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা চাকরি করতে পারবেন। তবে গ্রীষ্মকালে ফুল টাইম কাজ করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রিয়া যাওয়ার সময় সঙ্গে ৬-৮ মাসের খরচ নিয়ে যাওয়া ভালো হবে শিক্ষার্থীদের জন্য। জার্মান ভাষা জানা থাকলে দেশটিতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

অস্ট্রিয়ায় স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে দেশটিতে ন্যূনতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) জন্য আবেদন করতে পারবেন। তা ছাড়া পড়াশোনা শেষে এক বছরের জব সার্চ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। তথ্যসূত্র: স্টাডি স্পাই

Scroll to Top