বনাঞ্চল

একাই গড়েছেন ১৩৬০ একর বনাঞ্চল

ডেস্ক রিপোর্ট

গাছ মানুষের বন্ধু। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তা আমরা গাছ থেকে পেয়ে থাকি। শুধু অক্সিজেন নয়, গাছ নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে যত বেশি গাছ রোপণ করা হবে, তত বেশি আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারব।

বলা হয়, প্রকৃতি যা নেয় ফিরিয়ে দেয় তার শতগুণ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সে কথা ভুলে গিয়ে অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতি। তাই প্রকৃতিও নিজের প্রতিশোধ নিজেই নিয়ে নিচ্ছে। যে কারণে এখন প্রতিবছরই লেগে রয়েছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভূমিকম্পের মতো নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বনাঞ্চল

একটা গাছ থেকে মানুষের যে পরিমাণ উপকার হয়, কেটে ফেললে ক্ষতি হয় আরও বেশি। কিন্তু সব মানুষ তো আর সমান হয় না। তাই আজকের এই অসচেতন সমাজে দাঁড়িয়েও সচেতনতার বার্তা দিয়ে চলেছেন ভারতের অরণ্যমানব যাদব মোলাই পায়েং। শুনতে অবাক লাগলেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় একাই তিনি তৈরি করেছেন একটা আস্ত বন। যদিও সেই কাজ সহজ ছিল না মোটেই। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদীর বালুচরে ১৩৬০ একর জমিজুড়ে তিনি তৈরি করেছেন এই বনাঞ্চল।

আসামের জোরহাট জেলার কোকিলামুখ গ্রামের কাছে ব্রহ্মপুত্রের সেই বনকে বলা হয় ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’। এই বন সৃজনের কর্মকাণ্ডই যাদবকে এনে দিয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি। ২০১৫ সালে যাদবকে বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ প্রদান করেছে ভারত সরকার। ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে ‘Forest Man of India’ শিরোপা দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, গাছের প্রতি তার ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যচিত্র।

দক্ষিণ ভারতে যাদবকে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রও বানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে মেক্সিকো এবং দুবাই থেকে একই রকম বনাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যও ডাক পেয়েছেন তিনি। ১৯৫৯ সালে আসামের জোরহাট জেলার কোকিলামুখ গ্রামে রাজ্যের মিসিং জনগোষ্ঠীর এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই যাদব মোলাই পায়েং। আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর আগে এই বনভূমি তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি।

তার তৈরি সেই জঙ্গলে এখন হরেকরকম গাছের সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস। এলাকায় বন্যা হলে এই বনেই নাকি আশ্রয় নেয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হাতি কিংবা বিভিন্ন প্রজাতির সাপও। নিজের বন সম্পর্কে একবার এক সাক্ষাৎকারে যাদব বলেছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গাছ পাখি জীবজন্তু খুব ভালো লাগত। ধীরে ধীরে বুঝলাম, গাছ কাটলে শুধু গাছের ক্ষতি হয় না- আশপাশের পাখি বন্যপ্রাণীরাও বিপদে পড়ে।’

যাদবের বয়স যখন ১৯ বছর, সে সময় তারা থাকতেন ব্রহ্মপুত্রের পার্শ্ববর্তী এক দ্বীপে। কিন্তু ভূমিক্ষয়ের কারণে সেই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হলেও মাঝে মধ্যেই নিজেদের পুরোনো জায়গা দেখে আসতেন যাদব। এরই মধ্যে এক সময়  ভয়ংকর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসামের বিস্তীর্ণ এলাকা। তাতে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ওই দ্বীপ। এই অবস্থা দেখে সে সময় তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেন দ্বীপের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কেউ কথা না শোনায় তরুণ যাদব একাই প্রথমে মাত্র ২০টি বাঁশের বীজ পুঁতে শুরু করেছিলেন বৃক্ষরোপণের কাজ। যা আজ পরিণত হয়েছে বিশাল জঙ্গলে।

গাছ আমাদের অনেক উপকার করে। কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে, ছায়া দেয়, ফল দেয়। সেই ফল থেকে আবার চারাবীজ হয়। এভাবে একটা গাছের মাধ্যমে অনেক গাছের জন্ম হয়। শুধু তাই নয়, গাছপালার ফুল-ফল ও ছায়া আমাদের মনে অনাবিল আনন্দও সৃষ্টি করে। তাই আমাদের প্রত্যেককেই এক একজন যাদব হয়ে উঠা প্রয়োজন। যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে সুস্থ ও সবলভাবে।

Scroll to Top