ইবাদাত হচ্ছে আল্লাহতায়ালার বন্দেগী ও গোলামী করা

ইবাদাত হচ্ছে আল্লাহতায়ালার বন্দেগী ও গোলামী করা

ইসলাম ডেস্ক

ইবাদাত হচ্ছে আল্লাহতায়ালার বন্দেগী ও গোলামী করা। ‘ইবাদাত’ শব্দটি সর্বসাধারণ মুসলমান প্রায়ই বলে থাকে। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ অনেকেই জানে না। ‘ইবাদাত’ আরবি শব্দ যার অর্থ দাসত্ব, বন্দেগি, বা গোলামী করা। ইসলামি পরিভাষায়, ইবাদাত মানে হলো আল্লাহতায়ালার আনুগত্য করা, তাঁর নির্দেশ মেনে চলা এবং দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ-কর্মে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ইবাদত শব্দের আরো অর্থ হলো ‘আনুগত্য করা‘, ‘দাসত্ব করা’ বা ‘বন্দেগি করা’। ইসলামি পরিভাষায়, ইবাদত বলতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তাঁর বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা বোঝায়।  আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেনঃ

ومَا خَلَقْتُ الجن والانس الا ليعبدون (الذرية : ٥٦)
“আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদাত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা জায যারিয়াত: ৫৬)

এ থেকে নিসন্দেহে বুঝা যায়, মানুষের জন্ম, জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত এবং বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন আপনারা সহজেই বুঝতে পারেন যে, ‘ইবাদাত’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ জেনে নেয়া আমাদের পক্ষে কতখানি জরুরী। এ শব্দটির অর্থ না জানলে যে মহান উদ্দেশ্যে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আপনি কিছু। এ লাভ করতে পারেন না। আর যে বন্ধু আর উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে না তা বার্থ ও নিষ্ফল হয়ে থাকে।

চিকিৎসক রোগীকে নিরাময় করতে না পারলে বলা হয়  সে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে, কৃষক ভাল ফসল জন্যাতে না পারলে কৃষিকার্যে তার বার্থভা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তেমনি আপনারা যদি আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য লাভ অর্থাৎ ইবাদাত করতে না পারেন তবে বলতে হবে যে, আপনাদের জীবন বার্থ হয়েছে। এজন্যই আমি আশা করি আপনারা এ ‘ইবাদাত’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য জানার জন্য বিশেষ মনোযোগী হবেন এবং তা আপনাদের হৃদয়-মগযে বদ্ধমূল করে নিবেন। কারণ মানব জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এরই ওপর একান্তভাবে নির্ভর করে।

ইবাদাত শব্দটি আরবী ‘আবদ’ (১০) হতে উদ্ধৃত হয়েছে। ‘আবদ’ অর্থ সাস ও গোলাম। অতএব ‘ইবাদাত’ শব্দের অর্থ হবে বন্দেগী ও গোলামী করা। যে ব্যক্তি অন্যের দাস সে যদি তার বাস্তবিকই মনিবের সমীপে একান্ত অনুগত হয়ে থাকে এবং তার সাথে ঠিক ভূতোর ন্যায় ব্যবহার করে, সংব একে বলা হয় বন্দেগী ও ইবাদাত। পক্ষান্তরে কেউ যদি কারো চাকর হয় এবং মনিবের কাছ থেকে পুরোপুরি যেতন আদায় করে, কিন্তু তবুও সে যনি ঠিক চাকরের ন্যায় কাজ না করে তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোয় করছে। আসলে একে অকৃতজ্ঞতা বলাই বাঞ্ছনীয়। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে, মনিবের সামনে ‘চাকরের ন্যায় কাজ করা এবং তার সমীপে আনুগত্য প্রকাশ করার উপায় কি হতে পারে।

বান্দাহ বা চাকরকে প্রথমত মনিবকে ‘প্রভু’ বলে স্বীকার করতে হবে এবং মনে করতে হবে যে, যিনি গ্রামার মালিক, যিনি আমাকে দৈনন্দিন রুজী দান করেন এবং যিনি আমার হেফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন তাঁরই অনুগত হওয়া আমার কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কেউই আমার আনুগত্য লাভের অধিকারী নয়। সকল সময় মনিবের আনুগত্য করা, তাঁর হুকুম পালন করা, তাঁর অনুবর্তিতা মুহূর্তের জন্যও পরিত্যাগ না করা, মনিবের বিরুদ্ধে মনে কোন কথার স্থান না দেয়া এবং অন্য কারো কথা পালন না করাই বান্দাহর দ্বিতীয় কর্তব্য। গোলাম সবসময়ই গোলাম তার একথা বলার কোন অধিকার নেই যে, আমি মনিবের এ আদেশ মানব্যে আর অমুক আদেশ মানবো না। কিংবা আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনিবের গোলাম আর অন্যান্য সময় আমি তার গোলামী হতে সম্পূর্ণ আযাদ ও মুক্ত।

মনিবের প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রম প্রদর্শন এবং তার সমীপে আদর রক্ষা করে চলা বান্দার তৃতীয় কাজ। আদব ও সম্মান প্রকাশের যে পদ্মা মনিব নির্দিষ্ট করে দেরেন তাই অনুসরণ করা, সালাম দেয়ার জন্য মনির যে সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সেই সময়ে নিশ্চিতরূপে উপস্থিত হওয়া এবং মনিবের আনুগত্য ও দাসত্ব স্বীকারে নিজের প্রতিজ্ঞা ও আন্তরিক নিষ্ঠা প্রমাণ করা একান্ত আবলাক।

এ তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি সম্পন্ন হয় আরবী পরিভাষার তাকেই বলে ‘ইবাদাত’। প্রথমত, মনিবের দাসত্ব স্বীকার, দ্বিতীয়ত, মনিবের আনুগত্য এবং তৃতীয়ত, অনিবের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون (الذريت (٥٦)
এর প্রকৃত মর্ম হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা জ্বিন ও মানব জাতিকে একমাত্র এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কেবল আল্লাহ তাআলারই দাসত্ব করবে, অন্য কারো নয়, কেবল আল্লাহর হুকুম পালন করবে, এছাড়া অন্য কারো হুকুম অনুসরণ করবে না এবং কেবল তাঁরই সামনে সম্মান ও সম্ভ্রম প্রকাশের জন্য মাথা নত করবে, অন্য কালে সামনে নয়। এ তিনটি জিনিসকে আল্লাহ তাআলা বুঝিয়েছেন এ ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ‘ইবাদাত’ দ্বারা। যেসব আয়াকে নামায-রোযার হাকীকত আল্লাহ তাআলা ইবাদাতের নির্দেশ দিয়েছেন তার অর্থ এটাই। আমাদের দেখ নবী এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের যাবতীয় শিক্ষার সারকবা 1 الأتعبدوا الأآباء “আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না” অর্থাৎ দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগা সারা জহানে একজনই মাত্র বাদশাহ আছেন তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে তাহলো আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থ্য এবং একটি মাত্র সম্প্রই আছে, যার পূজা-উপাসনা, আরাধনা করা যেতে পারে। আর সেই সন্তই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ।

ইবাদাত শক্ষের এ অর্থ আপনি স্মরণ রাখুন এবং আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে থাকুন। একটি চাকর যদি মনিবের নির্ধারিত কর্তব্য পালন না করে বরং তাঁর সামনে কেরন হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, লক্ষ বার কেবল ভার নাম জপে ভবে এ চাকরটি সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? মনিব তাকে অন্যান্য মানুষের প্রাপ্য আসায় করতে বলেন। কিন্তু সে কেবল সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে মনিবের সামনে মাথা নত করে দশবার সালাম করে এবং আবার হাত বেঁধে দাঁড়ায়। মনিব তাকে অনিষ্টকর কাজগুলো বন্ধ করতে আষেশ করেন। কিন্তু সে সেখান থেকে একটুও নড়ে না। বরং সে কেবল সিজদাহ করতে থাকে। মনিব তাকে চোরের হাত কাটতে বলেন। কিন্তু সে নাড়িয়ে থেকে সুললিত কণ্ঠে বিশবার পড়তে বা উচ্চারণ করতে থাকে ‘চোরের হাত কাট’ কিন্তু সে একবারও এমন শাসনাবন্তঃ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে না যার অধীন চোরের হাত কাটা সম্ভব হবে। এমন চাকর সম্পর্কে কি মন্তব্য করবেন? আপনি কি বলতে পারেন যে, সে প্রকৃতপক্ষে মনিবের বন্দেগী ও ইবাদাত করছে? আপনার কোন চাকর এরূপ করলে আপনি তাকে কি বলবেন তা আমি জানি না, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে আল্লাহর যে চাকর এরূপ আচরণ করে তাকে আপনি ‘বড় আবেদ’ (ইবাদাতকারী, বুযর্গ ইত্যাদি) নামে অভিহিত করেন। এরা সকাল ওতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলার কত শত হুকুম পাঠ করে, কিন্তু সেগুলো পালন করার এবং কাজে পরিণত করার জন্য একটু চেষ্টাও করে না। বরং কেবল নফলের পর নফল পড়তে থাকে, আল্লাহর নামে হাজার দাদা তাসবীহ জপতে থাকে এবং মধুর কন্ঠে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করতে থাকে। আপনি তার এ ধরনের কার্যাবলী দেখেন, আর বিস্মিত হয়ে বলেন। ‘ওছে। লোকটা কত বড় আবেদ আর কত বড় পরহেযগার।’ আপনাদের এ ভুল ধারণার মূল কারণ এই যে, আপনারা ইয়ালত’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ মোটেই জানেন না।

আর একজন চাকরের কথা ধরুন। সে রাত-দিন কেবল পরের কাজ করে অন্যের আদেশ শুনে এবং পালন করে, অন্যের আইন মেনে চলে এবং কার প্রকৃত মনিবের যত আদেশ ও ফরমানই হোক না কেন, তার বিরোধিতা করে। কিন্তু ‘সালাম’ দেয়ার সময় সে তার প্রকৃত মনিবের সামনে উপস্থিত হয় এবং মুখে কেবল তার নাম জপরে থাকে। আপনাদের কারো কোন চাকর এরূপ করলে আপনারা কি করবেন। তার ‘সালাম’ কি তার মুখের ওপর নিক্ষেপ করবেন না। মুখে মুখে সে যখন আপনাকে মনির আর মালিক বলে ডাকবে তখন আপনি কি তাকে একথা বলবেন না যে, তুই ডাহা মিথ্যাবাদী বেঈমান তুই আমার বেতন খেয়ে অনোর তাবেদারী করিস, মুখে আমাকে মনির বলে ডাকিস, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেবল অন্যেরই কাজ করে বেড়াস। এটা নিতান্ত সাধারণ বৃদ্ধির কথা এটা কারো বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু কি আশ্চর্যের কথা। যারা রাত-দিন আল্লাহর আইন ভঙ্গ করে, কাফের ও মুশরিকদের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং নিজেদের বাস্তব কর্মজীবনে আল্লাহর বিধানের। কোন পরোয়া করে না, তাদের নামায-রোযা, তাসবীহ পাঠ, কুরআন তেলাওয়াত, হজ্জ, যাকাত ইত্যাসিকে আপনি ইবাদাত বলে মনে করেন। এ ভুল ধারণারও মূল কারণ ইবাদাত শব্দের প্রকৃত অর্থ না জানা।

আর একটি চাকরের উদাহরণ নিন। মনিব তার চাকরদের জন্য যে ধরনের পোশাক নির্দিষ্ট কয়েছেন, মাপ-জোখ ঠিক রেখে সে ঠিক সেই ধরনের পোশাক পরিধান করে, বড় আদব ও যত্ন সহকারে সে অনিকের সামনে হাজির হয়, প্রত্যেকটি হুকুম শুনামাত্রই মাথা নত করে শিরোধার্য করে নেয় যেন তার তুলনায় বেশী অনুগত চাকর আয় কেউই নয়। ‘সালাম’ দেয়ার সময় সে একেবারে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং মনিবের নাম জপবার ব্যাপারে সমস্ত চাকরের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও নিষ্ঠা প্রমাণ করে; কিন্তু অন্যদিকে এ ব্যক্তি মনিবের রূপমন এবং বিদ্রোহীদের খেদমত করে, মনিবের বিরুদ্ধে তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করে এবং মনিবের নাম পর্যন্ত দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে তারা যে চেষ্টাই করে, এ হতভাগা ভার সহযোগিত। করে রাতের অন্ধকারে সে মনিবের ঘরে সিম কাটে এবং জোর হলে বড় অনুগত চাকরটির ন্যায় হাত বেঁধে মনিবের সামনে হাজির হয়। এ চাকরটি সম্পর্কে আপনি কি বলবেন। আপনি নিশ্চয়ই তাকে মুনাফিক, বিদ্রোহী ও নিমকহারাম প্রভৃতি নামে অভিহিত করতে একটুও কুষ্ঠিত হবেন না। কিন্তু আল্লাহর কোন চাকর যখন এ ধরনের হাস্যকর আচরণ করতে থাকে এবম তাকে আপনারা কি বলতে থাকেন। তখন আপনারা কাউকে ‘পীর সাহেব, কাউকে ‘হযরত মাওলানা’, কাউকে ‘বড় কামেল’, ‘পরহেযগার প্রস্তুতি নামে তৃষিত করেন। এর কারণ এই যে, আপনারা তাষের মুখে মাপ মত লঞ্চ সাড়ি নামায-রোমার হাকীকত দেখে, তাসের পায়জামা পায়ের গিরার দু’ ইঞ্চি ওপরে দেখে, তাদের কপালে নাফায়ের কালো দাগ দেখে এবং তাদের লম্বা লম্বা নামায ও মোটা মোটা সানার তাসবীহ দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এদেরকে বড় দ্বীনদার ও ইবাদাতকারী বলে মনে করেন। এ ভুল শুধু এজন্য যে, ‘ইবাদাত’ ও দ্বীনদারীর স্কুল অর্থই আপনাদের মনে বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে।

আপনি হয়তো মনে করেন, হাত বেঁবে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, হাটুর ওপর হাত রেখে মাথা নত করা, মাটিতে মাথা রেখে সিজদা করা এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট শব্দ উচ্চারণ করা শুধু এ কয়টি কাজই প্রকৃত ইবাদাত।

হয়ত আপনি জনে করেন, রমযানের প্রথম দিন হতে শাওয়ালের চাঁদ উঠা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখার নাম। ইবাদাত। আপনি হয়তে। এটাও মনে করেন যে, কুরআন শরীফের কয়েক কক্’ পাঠ করার নামই ইবাদাত, আপনি বুঝে থাকেন মক্কা শরীফে গিয়ে কা’বা ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করার নামই ইবাদাত। মোটকথা, এ ধরনের বাহ্যিক রূপকে আপনারা ‘ইবালাত’ মনে করে নিয়েছেন এবং এ ধরনের বাহ্যিক রূপ বজায় রেখে উপরোক্ত কাজগুলো কেউ সমাধা করলেই আপনারা মনে করেন
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون on, hawra gorane were at )الذريت ٥٦٠( এর উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছে। তাই জীবনের অন্যান্য ব্যাপারে সে একেবারে আযাদ নিজের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারে।

কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তাআলা যে ইবাদাতের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যে ‘ইবাদাত’ করার আদেশ আপনাকে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। সেই ইবাদাত্ত এই যে, আপনি আপনার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তেই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে চলবেন এবং আল্লাহর আইনের বিরোধী এ দুনিয়ায় যা কিছু প্রচলিত আছে তা অনুসরণ করতে আপনি একেবারে অস্বীকার করবেন। আপনার প্রত্যেকটি কাজ, প্রত্যেকটি গতিবিধি আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে হতে হবে। এ পন্থায় যে জীবনযাপন করবেন তার সবটুকুই ইবাদাত বলে গণ্য হবে। এ ধরনেয় জীবনে আপনার শয়ন-জাগরণ, পানাহার, চলা-ফিরা, কথা বলা, আলোচনা করাও ইবাদাত বিবেচিত হবে। এমন কি নিজ স্ত্রীর কাছে যাওয়া এবং নিজের সন্তানদেরকে স্নেহ করাও ইবামাতের শামীল হবে। যেসব কাজকে আপনরা সুনিয়াদারী’ বলে থাকেন তাও ‘ইবাদাত’ এবং স্বীনদারী হতে পারে- যদি সকল বিষয় আপনি আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্য থেকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে সমাধা করেন। আর পদে পদে এদিকে লক্ষ্য রাখেন যে, আল্লাহর কাছে কোনটা জায়েখ আর ১০৬ কোনটা নাজায়েয, কি হালাল আর কি হারাম, কি করব আর কি নিষেধ, কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট আর কোন কাজে হন অসন্তুষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বল্য যায়, আপনি রুজি ও অর্থোপার্জনের জন্য বের হন। এ পথে হারাম উপার্জনের অসংখ্য সহজ উপায় আপনার সামনে আসবে। এখন আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করে সেই সুযোগ গ্রহণ না করেন এবং কেবল হালাল রুজি ও অর্থ উপার্জন করেন তবে এ কাজে আপনার যে সময় লেগেছে তা সবই ইবাদাত এবং এ হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ ঘরে এনে আপনি নিজে খান আর পরিবার পরিজনের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, সেই সাথে যদি আল্লাহর নির্ধারিত অন্যান্য হকদারের হকও আদায় করেন, তাহলে এসব কাজেও আপনি অসীম সওয়াব পাবেন। পথ চলার সময় আপনি পথের কাঁটা দূর করেন এ ধারণায় যে, এটা দ্বারা আল্লাহর কোন বান্দাহ কষ্ট পেতে পারে তবে এটাও আপনার ইবাদাত বলে গণ্য হবে। আপনি কোন রুগ্ন বাক্তির শুশ্রুষা করলেন, কোন ব্যক্তিকে পথ চলতে সাহায্য করলেন, কিংবা কোন বিপন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য করলেন ওবে এটাও ইবাদাত হবে। কথাবার্তা বলতে আপনি মিথ্যা, বীবত, কুৎসা রটনা অশ্লীল কথা বলে পরের মনে আঘাত দেয়া ইত্যাদি পরিহার করেন এবং আল্লাহর ভয়ে কেবল দত্য কথাই বলেন তবে যতক্ষণ সময় আপনার এ কাজে বায় হবে, তা সবই ইবাদাতে অতিবাহিত হবে।

অতএব চেতনা পাতের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর আইন অনুযারী চলা এবং তাঁরই নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করার নামই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত। এ ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এ ইবাদলও সবসময়ই হওয়া চাই এ ইবাদাতের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রকাশ্য রূপ নেই, কেবল প্রতিটি রূপের প্রত্যেক কাজেই আল্লাহর ইবাদাত হতে হবে। আপনি একথা বলতে পারেন না যে, আমি অমুক সময় আল্লাহর বান্দাহ আর অমুক সময় আল্লাহর বান্দায় নই। আপনি একথাও বলতে পারেন না যে, অমুক সময় আল্লাহর ইবাদাতের জন্য, আর অমুক সময় আল্লাহর কোন ইবাদাত করতে এয় না। এ আলোচনা দ্বারা আপনারা ইবাদাত শব্দের অর্থ ভালরূপে আনলেন একরা বুঝতে পারলেন যে, প্রত্যেক মুহূর্তে সকল অবস্থায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করে চলার নামই ইবাদাত। এখানে আপনি এ প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে এ নামায, রোযা, হজ্জ ও বাকাত ইত্যাদিকে কি বলা যায়? উত্তরে আমি বলবো যে, এসব ইবাদাত বটে, এ ইবাদাতগুলোকে আপনার ওপর ফরম করে দেয়া হয়েছে শুধু এজন্য যে, আপনার জীবনের প্রধান ও বৃহত্তম উদ্দেশ্য যে, প্রতি মুহূর্তে ও প্রত্যেক অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত কথা, সেই বিরাট উদ্দেশ। আপনি এসবের মাধ্যমে লাভ করবেন। নামায আপনাকে দৈনিক পাঁচবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তুমি আল্লাহ তাআলার দাস তাঁরই বন্দেগী নামায-রেয়ার  করা তোমার কর্তব্য রোষা বছরে একবার পূর্ণ একটি মাস আপনাকে এ বন্দেগী করার জন্যই প্রস্তুত করে, যাকাত আপনাকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে, তুমি যে অর্থ উপার্জনি করেছো তা আল্লাহর দান, তা কেবল তোমার খেয়াল-খুলী মত ব্যয় করতে পার না। বরং তা দ্বারা তোমার মালিকের হক আদায় করতে হবে। হজ্জ মানব মনে আল্লাহর প্রেম ও ভালবাসা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির এমন চিত্র অঙ্কিত করে যে, একবার তা মুদ্রিত হলে সমগ্র জীবনেও মন হতে তা মুছে যেতে পারে না। এসব বিভিন্ন ইবাদাত আদায় করার পর আপনার সমগ্র জীবন যদি আল্লাহর ইবাদাতে পরিণত হবার উপযুক্ত হয়, তবেই আপনার নামায প্রকৃত নামায হবে, রোযা খাঁটি রোখা হবে, থাকাও সত্যিকার যাকাত এবং হচ্ছ আসল হজ্জ হবে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ উদ্দেশ্য হাদিল না হলে কেবল রুকু’-নিজনাহ, অনাহার-উপবাস, হজ্জের অনুষ্ঠান পালন করা এবং যাকাতের নামে টাকা ব্যয় করলে আপনার কিছুই লাভ হবে না। বাহ্যিক ও আনুষ্ঠানিক ইবাদাতগুলোকে মানুষের একটি দেহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এতে প্রাণ থাকলে এবং চলাফিরা বা কাজ-কর্ম করতে পারলে নিসন্দেহে তা জীবিত মানুষের দেহ, অন্যথায় তা একটি প্রাণহীন দেহ মাত্র। লাশের চোখ, কান, হাত, পা সবকিছুই বর্তমান থাকে; কিন্তু প্রাণ থাকে না বলেই তাকে আপনারা মাটির গর্তে পুতে রাখেন। তদ্রুপ নামাযের আরকান-আহকাম যদি ঠিকভাবে আদায় করা হয় কিংবা রোযার শর্তাবলীও। যদি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়, কিন্তু হৃদয় মনে আল্লাহর ভয়, আল্লাহর প্রেম-ভালবাসা এবং তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য করার ভাবধারা বর্তমান না থাকে -ঠিক যে জন্য এসব আপনার ওপর ফরয করা হয়েছিল, তবে তাও একটি প্রাণহীন ও অর্থহীন জিনিস হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আপনাদের ওপর এই যে, বিভিন্ন ইবাদাত ফরয করা হয়েছে, এসব কিভাবে এবং কি উপায়ে আপনাকে সেই জাসন ও বৃহত্তম ইবাদাতের জন্য প্রস্তুত করে, সেই ইবাদাতগুলোকে যদি আপনি বুঝে গুনে আমায় করেন, তবে তা থেকে আপনার জীবনে কি প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ে পরবর্তী প্রবন্ধে ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো- ইনশাআল্লাহ।

আরো পড়ুন
মুসলিমদের একমাত্র আদর্শিক নেতা মুহাম্মাদ (সা.)
আরো পড়ুন
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সংঘবদ্ধ জীবনযাপন মুমিনের জন্য ফরয
আরো পড়ুন
অযোগ্য ও অসৎ লোককে ভোট প্রদান একটি গোনাহের কাজ
আরো পড়ুন
ভোটের তাৎপর্য: আমানত, সাক্ষ্য ও সুপারিশ হিসেবে একজন মুসলমানের নাগরিক দায়িত্ব
আরো পড়ুন
কোরআন-হাদিসের আলোকে দলবদ্ধ জীবন যাপনের গুরুত্ব
আরো পড়ুন
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ কেন সৃষ্টির করলেন?
আরো পড়ুন
Scroll to Top