শেখ জিল্লুর রহমান
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ কেন সৃষ্টির করলেন? বা আমারা পৃথিবীতে কেন এসেছি? আমদের খালি চোখ যতদূর দেখতে পায় এবং যা দেখতে পায় না তার কোনোকিছুই উদ্দ্যেশ্য বিহীন সৃষ্টি হয়নি। আমাদের এই পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল প্রণী ও জড়বস্তুর সবকিছুরই কোনো না কোনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টিরও কারণ রয়েছে। মহানা আল্লাহতায়াল মানব জাতিকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমরা কি ধারণা করেছ যে, আমি তোমাদেরকে এমনিই সৃষ্টি করেছি? আর তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না?” (সূরা: আল-মুমিনূন, আয়াত: ১১৫)। আজকের আলোচনায় মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য
কোরআনে মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি কারোর অধিকারের আওতাধীনে তারই অর্পিত ক্ষমতা-ইখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে খলীফা বলে। খলীফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে ক্ষমতার অধিকার দান করেছেন, তাই সে ক্ষমতা ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করার অধিকার রাখে না। বরং মালিকের ইচ্ছে পূরণ করাই হয় তার কাজ। যদি সে নিজেকে মালিক মনে করে বসে এবং তার ওপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে থাকে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে নিয়ে তারই ইচ্ছে পূরণ করতে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ’সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি।” আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না।” (সূরা বাকারা, আয়াত ৩০)
আয়াতে বর্ণিত ‘খলীফা’ শব্দের অর্থ নির্ণয়ে বিভিন্ন মত এসেছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেন, এর অর্থ স্থলাভিষিক্ত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বলছেন যে, আমি তোমাদের ছাড়া এমন কিছু সৃষ্টি করতে যাচ্ছি যারা যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। ইবনে জারীর (রহ.) বলেন, আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমি যমীনে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে ইনসাফের সাথে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। আর এ প্রতিনিধি হচ্ছে আদম এবং যারা আল্লাহর আনুগত্য ও আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে তার বিধান প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবে। [ইবনে কাসীর]
এছাড়া আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ‘খলিফা’ বা প্রতিনিধি শব্দের অর্থ নির্ণয়ে বলেন, মানুষ আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠা, বিধান বাস্তবায়ন ও একত্ববাদের আহ্বানের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতিনিধি। আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মানুষকে আল্লাহ প্রতিনিধি বলেছেন। কেননা সে আল্লাহর মুকাল্লাফ (ইসলামী আইনের অধীন ব্যক্তি) ব্যক্তিদের ভেতর তার বিধান প্রয়োগ করে। (তাফসিরে ইবনুল জাওজি, পৃষ্ঠা-২৬)
ব্যক্তি হিসেবে নবীরাই আল্লাহর প্রতিনিধি
সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাও মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণ সমাজের সর্বোত্র ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উদেশ্যে পৃথিবীতে এসেছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, (হে দাঊদ), নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা: সোয়াদ, আয়াত: ২৬)
গোষ্ঠী বা দল হিসেবে মুমিনরা পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাথীরা যখন মদীনায় তাশরীফ আনলেন এবং আনসারগণ তাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তখন সমস্ত আরব এক বাক্যে তাদের শক্রতে পরিণত হলো। সাহাবাগণ তখন রাতদিন অস্ত্ৰ নিয়ে থাকতেন। তখন তারা বললোঃ আমরা কি কখনো এমনভাবে বাঁচতে পারবো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমাতে পারবো? তখন নাযিল হয়, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।’ সূরা: আন-নূর; আয়াত: ৫৫।” (ত্ববারানী, মুজামুল আওসাত ৭/১১৯, হাদীস ৭০২৯, হাকীম- মুস্তাদরাকঃ ২/৪০১, দ্বিয়া আল-মাকদেসীঃ মুখতারাহঃ ১১৪৫)
মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম আহকাম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যথাযত পালন ও প্রতিষ্ঠিত করাই মানুষের মূল উদ্দেশ্যে। আল্লাহতায়ালা জ্বীন এবং মানুষকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তা হলো একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহ বলেন, “আমি জ্বীন এবং মানুষকে আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)
আল্লাহ তা’আলা বান্দার যেসমস্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন এবং যে সমস্ত বিষয় আল্লাহর ভালবাসা ও পছন্দের বিপরীত ও পরিপন্থী, তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নামই এবাদত।
এছাড়া আরো অনেক আয়াত প্রমাণ করে যে, জ্বীন-ইনসানের সৃষ্টিতে আল্লাহতায়ালার এক মহান উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে আল্লাহর আদেশসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং নিষেধসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হওয়ার নাম ইবাদাত। আল্লাহতায়ালা বলেন, “তাদেরকে এছাড়া কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে আল্লাহর ইবাদাত করবে।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
প্রতিনিধিত্ব আল্লাহর অনুগ্রহ
পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব লাভ করা মুমিনের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন। সুতরাং কেউ কুফরি করলে তার কুফরির জন্য সে নিজেই দায়ী হবে। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৯)
প্রশ্নহচ্ছে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খলিফাতুল্লাহ বলা যাবে কি
নবীরাসূলদের পরে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘খলিফাতুল্লাহ’ বা আল্লাহর প্রতিনিধি সম্বোধন করা অনুচিত। এক ব্যক্তি ওমর (রা.)-কে খলিফাতুল্লাহ বলে সম্বোধন করলে তিনি তাকে ভর্তৎসনা করে বলেন, ‘তোমার অমঙ্গল হোক! তুমি কতই না দূরবর্তী সম্বোধন করলে। আমার মা আমার নাম রেখেছেন ওমর। তুমি যদি এই নামে আমাকে সম্বোধন করো আমি তা মেনে নেব। অতঃপর বড় হলে আমার উপনাম হয়েছে আবু হাফস। তুমি আমাকে এই নামে সম্বোধন করলে আমি তা মেনে নেব। অতঃপর তোমরা আমার ওপর তোমাদের বিষয়গুলো তথা খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছ এবং নাম রেখেছ আমিরুল মুমিনিন। তুমি যদি এই নামে সম্বোধন করো, সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। ’ (আল ফুতুহাতুর রব্বানিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৫৬)
আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব লাভের শর্ত
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব লাভের দুটি শর্ত আরোপ করেছেন : ঈমান আনা ও নেক কাজ করা। উভয় শর্তের অধীনে আছে আরো একাধিক শর্ত। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—
আসমান তথা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। ২. দ্বীনি লক্ষ্য অর্জনে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার। ৩. অন্তরে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। ৪. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসাকে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেওয়া। ৫. পরকালকে ইহকালের ওপর প্রাধান্য দেওয়া। ৬. বিশুদ্ধ ঈমান ও আমলের মাধ্যমে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ। ৭. সমাজ ও রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন; যেমন—অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান, কূটনীতি, প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন। ৮. জগতবাসীকে মহান স্রষ্টার সঙ্গে যুক্ত করা এবং তাঁর পথে আহ্বান। (সুন্নাতুল্লাহ, পৃষ্ঠা-১৭১)
প্রতিনিধিত্ব পরিবর্তনশীল
পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব ও বৈশ্বিক নেতৃত্ব পরিবর্তনশীল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, শিগগিরই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রু ধ্বংস করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তোমরা কী করো তা তিনি লক্ষ করবেন। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২৯)
আল্লাহ অযোগ্যকে প্রতিনিধিত্ব দেন না
আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব যোগ্য ব্যক্তিদের জন্যই নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যারা অন্তরের বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাজ, বুদ্ধিবৃত্তি, শারীরিক সক্ষমতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় বলীয়ান হবে তারাই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তারাই বৈশ্বিক নেতৃত্বের মুকুট লাভ করবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে পৃথিবীর নেতৃত্ব মানুষের হাতবদল হতে থাকে। নিম্নোক্ত আয়াতগুলো থেকে যা অনুধাবন করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনি ইসরাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারে স্ফীত হবে। অতঃপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হলো, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সব ধ্বংস করেছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় তাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম এবং সংখ্যায় গরিষ্ঠ করলাম। ’ (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৪-৬)
মুমিনের উচিত দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ধৈর্যশীল হওয়া
প্রায় শতাব্দীকাল যাবৎ মুসলিম জাতি পৃথিবীর নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়েছে এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে তারা কোণঠাসা। ফলে মুমিনের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, ‘আমরা তো আল্লাহর প্রতিনিধি’ তাহলে কেন আমরা বৈশ্বিক নেতৃত্বে নেই। এমন পরিস্থিতিতে মুমিনের করণীয় হলো ধৈর্য ও প্রত্যয়ের সঙ্গে নিজেদের বৈশ্বিক নেতৃত্বের যোগ্য করে তোলা। অবিশ্বাসীদের মন্তব্য ও তাচ্ছিল্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে আমাদের অন্তরে এই বিশ্বাস রাখা যে, আমরা যোগ্য হলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে নেতৃত্বে সমাসীন করবেন। কেননা আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। যারা দৃঢ়বিশ্বাসী নয়, তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে।’ (সুরা: রোম, আয়াত: ৬০)
মতভেদ ভুলে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবোধ্য হওয়া
বিচ্ছিন্ন জাতিকে আল্লাহতায়ালা ক্ষমতা দ্বান করেন না। পরস্পর মতবিরোধে বিভক্ত জাতির মধ্যে প্রায়শই হাঙ্গামায় লিপ্তহতে দেখা যায়। যে জাতি নিজেদের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা সে জাতি বিশ্ব নেতৃত্বেসামাসীন হয়ে কিভাবে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারে? বিশ্ব ইতিহাস বলছে যখন যে জাতি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে সমাসীন হয়েছেন সে জাতির মধ্যে অবশ্যই নিদিষ্ট একটি বিন্দুতে ঐক্যবদ্ধতা লক্ষ্যকরা গেছে। এজন্য মহান আল্লাহতায়ালা কোরানুল কারীমে বলেছেন,
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡكُمۡ اِذۡ كُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِكُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ كُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَكُمۡ مِّنۡهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾
‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।’ সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৩)
সমগ্র বিশ্বমুসলিমের মধ্যে শরীয়তের নানা বিধান নিয়ে মতভেদ বিদ্যমান থাকায় নানা দল উপদলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে বিশ্বের অন্যজাতির মধ্যে সৃষ্ট নানা মতপথের দিকে আমরা ধাবিত হয়েছি। এমনকি এসব মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় আল্লাহতায়ালার দেওয়া দ্বীন বা জীবনব্যবস্থাকে কটাক্ষ্য পর্যন্ত করছি। আল্লাহতায়ালার দেওয়া জীবনব্যবস্থার চেয়ে সেকুলারীজম, ন্যাশানালীজম, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্রসহ বিভিন্ন মতাদর্শকে শ্রেষ্ট মনে করছি।